শহিদ আরবি শব্দ। এর বহুবচন শুহাদা। এর অর্থ হলো সাক্ষী। এ ছাড়াও এর অন্য অর্থ হলো আত্ম-উৎসর্গ করা। ইসলামি পরিভাষায় শহিদ হলো সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করে মৃত্যুবরণ করেন।
পবিত্র কোরআনে শহিদের মর্যাদা এবং সম্মান ব্যাপারে বেশ কিছু আয়াত আছে। নিচে শহিদের মর্যাদা ও সম্মান উল্লেখ করা হলো:
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান : ১৬৯)
আর যারা মহান আল্লাহর পথে ধর্মের জন্য নিহত হয়ে গেছে তাদের সাধারণ মৃত ব্যক্তিদের মতো মৃত বলে ধারণা করো না। বরং তারা এক অনন্য জীবনধারায় জীবিত এবং স্বীয় মহান আল্লাহর কাছে নৈকট্যপ্রাপ্ত অতি প্রিয়পাত্র। তারা রিজিকও প্রাপ্ত বটে।
এ আয়াত দ্বারা শহিদের সত্যিকার জীবনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, অর্থাৎ তারা আল্লাহর রহমত এবং সম্মান লাভ করছে, আর তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের আত্মা জীবিত থাকে।
প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে বরযখে বা কবরে বিশেষ ধরনের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের আজাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকিকত মানুষ জানে না। যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদের শহিদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহিদগণকে সে জীবনের অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, আমরা এ আয়াত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
শহিদের আত্মাকে সবুজ পাখির পেটে রাখা হয়। ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। তারপর তারা আরশের নিচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়েন। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কি চাইতে পারি? আমাদের যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোনো সৃষ্টিকে দেননি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করেন। যখন তারা বুঝল যে, তাদের কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদের দুনিয়ার জীবনে ফেরত পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহিদ হতে পারি। শহিদগণের সওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবেন; তখন তাদের মহান আল্লাহ তাদের বলবেন, আমি এটা আগে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোনো সুযোগ নেই। (মুসলিম : ১৮৮৭)।