ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে যাওয়ায় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পরিচালনায় শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ২০ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি থাকলেও তারা এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে পারবে। আগে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিলের আওতায় অযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
নতুন নির্দেশনায় পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন স্কিমের অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ শ্রেণীকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করে। সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত এই তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারে। স্কিমটির মেয়াদ তিন বছর হলেও গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে তহবিলের আকার আরও বাড়ানো হতে পারে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা এবং দুর্যোগে (যেমনÑ নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকা- বা কোভিড-১৯-এর মতো মহামারি) ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তহবিল থেকে বিতরণ করা মোট ঋণের অন্তত ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে দিতে হবে। এ ছাড়া মোট ঋণের কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগের শর্ত অনুযায়ী, কোনো ব্যাংককে তহবিলের জন্য যোগ্য হতে হলে তার শ্রেণীকৃত ঋণ ১০ শতাংশের কম এবং অন্তত তিন বছরের ব্যাবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হতো। নতুন নির্দেশনায় শুধু শ্রেণীকৃত ঋণের সীমা ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে গোপন থাকা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে, যার প্রভাব হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শর্ত শিথিলের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

