দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। পত্রিকার পাতায় নিয়মিতই বড় বড় দুর্নীতির খবর আসে। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির মিয়া ভাই রশীদ মিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির মিয়া ভাই প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া। ছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সারাজীবন করেছেন দুর্নীতি। গড়েছেন টাকার পাহাড়। রাজধানী ও গ্রামের বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক বনেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই দুর্নীতিবাজের শাস্তি হওয়ার কথা থাকলেও সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে হয়েছেন পুরস্কৃত। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলীর পদ। ‘দুর্নীতির মিয়া ভাই’ হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বানানো হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব)। আর এর পেছনে জড়িত রয়েছেন বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজনের প্রচ্ছন্ন সম্মতি। এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এখন নিজের স্ত্রী ফাতিমা যাকিয়াহর নামে চালাচ্ছেন হাজার কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য।
নিয়োগ-পদোন্নতিতেও কামাচ্ছেন অবৈধ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। কিন্তু একের পর এক দুদকের তলবেরও তোয়াক্কা করেন না তিনি। আওয়ামী লীগ আমলের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের আমলেই দুদকে ৩০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তার সাজা হওয়ার কথা থাকলেও হয়ে উঠেন আরও প্রভাবশালী। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা ‘থোড়াই কেয়ার’ করে এক উপদেষ্টার বরাতে হয়ে যান প্রধান প্রকৌশলী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান আবদুর রশিদ মিয়া। ২০১৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান। এসব পদে থেকেই তিনি প্রায় ৩০০ কোটির সম্পদ গড়ে তোলেন। এমন অভিযোগ উঠলে তদন্তে নামে দুদক। এখানেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চার দফায় দুদক তলব করলেও হাজির হননি আবদুর রশিদ মিয়া।
বিভিন্ন অফিসে বড় বড় পদে কর্মরত এসব দুর্নীতিবাজদের ধরতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতি বাড়তেই থাকবে। একইসঙ্গে সব শ্রেণির কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মচারী-কর্মকর্তারা যেন আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দুর্নীতি আমাদের সমাজের জন্য এক অভিশাপ। দুর্নীতি রুখতে হলে প্রতিটি মানুষের সামাজিক দায়িত্বও থেকে যায়। দুর্নীতিবাজ কেউ যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর সরকারকে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুর্নীতিবাজ আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা গেলে কেউ দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন