দাম্পত্য জীবন এক সুতায় গাঁথা দুটি ভিন্ন সত্তার মিলন। এই পবিত্র সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করতে এবং তা সুখময় করে তুলতে ইসলাম দিয়েছে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। বিশেষ করে মহিলাদের স্বভাবজাত স্পর্শকাতরতা ও সংবেদনশীলতার প্রতি লক্ষ্য রেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের এক অমূল্য উপদেশ দিয়েছেন। এটি কেবল একটি হাদিস নয়, বরং দাম্পত্য জীবনের গভীরতম রহস্যের এক প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যাখ্যা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার ব্যাপারে তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করো। কেননা তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। সবচেয়ে বাঁকা হলো পাঁজরের উপরের হাড়। তুমি যদি এটিকে একদম সোজা করতে যাও, ভেঙে ফেলবে; আবার রেখে দিলে বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব মহিলাদের ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করো (বুখারি)।
এই হাদিসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা বোঝা যায়, বক্রতা নারীদের স্বভাবজাত। এটি এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা থেকে নারী সম্পূর্ণ সোজা বা ত্রুটিমুক্ত হবেন না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। বরং রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তবে তা হতে হবে নম্র ভাষায় ও কোমলভাবে।
সহনশীলতার গুরুত্ব: হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পাঁজরের বাঁকা হাড়কে যদি আপনি সম্পূর্ণ সোজা করতে যান, তবে তা ভেঙে যাবে। ঠিক তেমনি নারীকে তার স্বভাবজাত বক্রতা থেকে সম্পূর্ণ সোজা করার চেষ্টা করলে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। সর্ববিষয়ে এবং সর্বক্ষেত্রে তাকে আপনার সমমনা পাওয়া যাবে না, কারণ স্বামী ও স্ত্রীর স্বভাব ভিন্ন ভিন্ন। অযথা চাপাচাপি করলে শান্তির পরিবর্তে অশান্তিই বৃদ্ধি পাবে। আবার যদি সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া হয়, তা হলে তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে যাবেন।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও সংবেদনশীল। একটি পরিবারের শান্তি ও শৃঙ্খলা মূলত উভয়ের সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে। স্ত্রী-স্বামীর জীবনসঙ্গী; এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ছাড়া চলা কঠিন। একইভাবে স্ত্রীরও স্বামীর তত্ত্বাবধান ছাড়া জীবন পরিচালনা করা কঠিন।
ভারসাম্যপূর্ণ দাম্পত্য জীবন:
সাধারণ নিয়ম হলো, বাইরের সব প্রয়োজন দেখভালের দায়িত্ব পুরুষের; আর ঘর-সংসার সামাল দেবে নারী। খাবার তৈরি, সন্তান লালন-পালন, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা এসব স্ত্রীর দায়িত্ব। যথার্থই বলা হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী হলো জীবনগাড়ির দুটি চাকা। উভয়ের মাঝে মিল-মহব্বত ও মতৈক্য ছাড়া জীবনগাড়ি মসৃণভাবে চলতে পারে না। যেখানে মিল-মহব্বত ও মতৈক্য নেই, সেখানে জীবনগাড়ি দ্রুত বেগে চলবে, এমনটি কল্পনা করাও অসম্ভব।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারির লেখক ইবনু আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে আরও একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, হযরত হাওয়া (আ.) কে আদম (আ.)-এর বাম পাঁজর থেকে বানানো হয়েছে। আদম (আ.) তখন শুয়ে ছিলেন। তাই তিনি টের পাননি। এ বিষয়টিও ইঙ্গিত করে নারী-পুরুষের মধ্যে এক নিবিড় ও প্রাকৃতিক সম্পর্ক।
সুতরাং দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি চাইলে রাসুল (সা.)-এর এই অমূল্য উপদেশকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে তা প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। নারীর প্রতি ধৈর্যশীল, সহানুভূতিশীল এবং সহনশীল আচরণই পারে একটি পরিবারকে জান্নাতের টুকরায় পরিণত করতে।