সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:৪৬ এএম

খেলাপি ঋণের ভারী বোঝা হালকা করতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:৪৬ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে যে সংকটে নিমজ্জিত, তার মূল কারণ হলো লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতে আসল চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিগত সময়ে নানা উপায়ে চাপা রাখা খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে এই হার ১২ শতাংশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়া শুধু উদ্বেগজনকই নয়, অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেতও বটে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও বাংলাদেশের অবস্থান নাজুক। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, খেলাপি ঋণের উচ্চহারে বাংলাদেশ এশিয়ার শীর্ষে। ভারতের হার যেখানে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, মালদ্বীপে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান লজ্জাজনক। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো, যেমন তাইপে বা কোরিয়া, খেলাপি ঋণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে।

খেলাপি ঋণের বিস্তার শুধু অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাই ডেকে আনে না, এটি ব্যাংক খাতে সুশাসনেরও চরম ঘাটতি প্রকাশ করে। গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায়, নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হাতে ঋণ তুলে দেওয়া হয়েছে অবলীলায়। সহজ শর্তে পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণকে আড়াল করা হয়েছে। এভাবে দায়সারা পদক্ষেপে সমস্যা আরও গভীর হয়েছে। এখন বাস্তব চিত্র সামনে আসায় এর ব্যাপকতা জনসমক্ষে স্পষ্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মাত্র ১ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েই পুনর্গঠনের যে প্রস্তাব উঠেছে, তা সাময়িক স্বস্তি দিলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। নীতিমালার ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রকৃত খেলাপিরা আরও সুযোগ নেবে- এই আশঙ্কাই প্রবল। তাই বিশেষজ্ঞরা যথার্থই বলেছেন, ঋণ বিতরণ ও আদায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন কঠোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী আর্থিক তদারকি, এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় দ্রুততা ও নিরপেক্ষতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সম্পদ জব্দ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করতে হবে। খেলাপি ঋণের বোঝা কেবল ব্যাংক নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আর সময় নষ্ট না করে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং জনগণের ব্যাংকের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার হয়।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে পারলে এই সংকট কাটানো সহজ হবে। সেই সঙ্গে বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংক পরিচালনায় জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি। খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তার চাপ শেষ পর্যন্ত সাধারণ আমানতকারীর কাঁধেই গিয়ে পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে,  ব্যাংক খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে খেলাপি ঋণ দ্রুত কমানোর পদক্ষেপ নিন। খেলাপি ঋণের ভারী বোঝা হালকা করতে না পারলে দেশের ব্যংক খাত ধীরে ধীরে কোমায় চলে যাবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা হারাতে শুরু করবে। এর জন্য নীতিমালা নয়, বরং সুশাসন, কঠোরতা এবং জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় ব্যাংক খাতের এই ভয়াবহ সংকট পুরো অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!