যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তার প্রশাসন রাশিয়ার অর্থনীতি ‘ধসিয়ে দেওয়ার’ লক্ষ্যে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করছে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
রোববার মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেখানে যা ঘটছে তাতে আমি মোটেই খুশি নই। তবে আমার মনে হয় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত মীমাংসা হবে।’
এর আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প জানান, তিনি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ‘দ্বিতীয় ধাপে’ যেতে প্রস্তুত। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেন, ‘রুশ তেলের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে দ্বিতীয় ধাপের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে অচল করে দিতে পারে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় আসতে বাধ্য করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাপ বাড়াতে প্রস্তুত, তবে ইউরোপীয় অংশীদারদেরও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। ইউক্রেনের সেনারা কতদিন টিকে থাকতে পারেন বনাম রাশিয়ার অর্থনীতি কতদিন টিকে থাকতে পারে—তা এখন প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে।’
স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একসঙ্গে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বিশেষ করে রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের ওপর শুল্ক বসায়, তাহলে দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ধসে পড়বে।’
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, রাশিয়ার টানা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। হামলায় ইউক্রেনের মন্ত্রিসভা ভবনে আগুন ধরে যায়। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, হামলায় ৮১০টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে—যা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
মার্কিন দূত কিথ কেলগ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি মোটেই কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানের বার্তা নয়।’
ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। তিনি বারবার মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন, যদিও দ্রুত যুদ্ধ সমাপ্তের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছেন।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কিছু অংশীদার এখনো রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনছে, যা ন্যায্য নয়। এ ধরনের দেশগুলোর ওপর শুল্ক বসানো একেবারেই সঠিক উদ্যোগ।’
গত মাসে আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিন মুখোমুখি বৈঠক করেন। এরপর ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। তবে ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শান্তিচুক্তির কোনো অগ্রগতি হয়নি। মস্কো ও কিয়েভ এখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হতে পারেনি, বরং রাশিয়া অব্যাহতভাবে ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন