ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে যখন কোয়েটার আকাশে ফুটে উঠল এক অপার্থিব দৃশ্য, শহরবাসী থমকে গেল বিস্ময়ে। কোহ-ই-মুরদার পর্বতমালার ওপর ভেসে উঠেছিল এক অদ্ভুত মেঘ। লেন্সের মতো গোল, রঙে রঙে ঝলমলে, যেন আকাশে রংধনুর টুকরো জেগে উঠেছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ (পিএমডি) পরে জানাল, এটি ছিল এক বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা ‘লেন্টিকুলার মেঘ’। মাত্র কুড়ি মিনিট স্থায়ী সেই মুগ্ধতার মুহূর্ত ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার ভোরে দেখা গেছে এই বিরল দৃশ।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে ফজরের নামাজের সময় শহরের আকাশে বিশাল এক উড়ন্ত চাকতির মতো মেঘ দেখা যায়। অনেকেই ভেবেছিলেন এটি হয়তো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ফলাফল, কিংবা সামরিক বাহিনীর নতুন কোনো গোপন প্রযুক্তির পরীক্ষা চলছে। মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি ও ভিডিও, যা ঘিরে শুরু হয় আলোড়ন।
বেলুচিস্তানের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে একই দৃশ্য দেখার কথা জানিয়েছেন। কেউ বলছেন এটি কোনো ‘অলৌকিক ঘটনা। আবার কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘মেঘটা যেন আকাশে ভেসে থাকা বিশাল কোনো উড়ন্ত চাকতি!’
তবে দিনের শেষে পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ (পিএমডি) বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়। এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা জানায়, ‘আজ ভোরে কোহ-ই-মুরদার অঞ্চলের উপরে দেখা মেঘটি ছিল একটি লেন্টিকুলার বা লেন্স-আকৃতির মৃদু মেঘের গঠন। এটি সূর্যোদয়ের আগে তৈরি হয়েছিল, প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী ছিল ও সূর্যোদয়ের ঠিক আগে মিলিয়ে যায়।’
আবহাওয়াবিদদের মতে, লেন্টিকুলার মেঘ তৈরি হয় যখন বাতাস স্থিতিশীল থাকে এবং পর্বত বা পাহাড়ের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে বয়ে যায়। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে বাতাসে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, যার শীর্ষে এমন মেঘ দেখা দেয়।
যুক্তরাজ্যের মেট অফিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘এই লেন্স-আকৃতির অরোগ্রাফিক মেঘগুলো দেখতে অনেকটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনির উড়ন্ত চাকতির মতো। তাই সারা বিশ্বে ইউএফও (অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু) দেখার অনেক ঘটনাকেই পরবর্তীতে আসলে লেন্টিকুলার মেঘ হিসেবে শনাক্ত করা হয়।’
পিএমডির মুখপাত্র আঞ্জুম নাজির জাইগুম বলেন, এই মেঘের উপস্থিতি আবহাওয়াগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিপজ্জনক নয়, বরং এটি একধরনের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে কোয়েটার মতো শুষ্ক ও পার্বত্য অঞ্চলে এমন দৃশ্য খুবই বিরল হওয়ায় স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হয়ে পড়েন।
একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, ‘মানুষ প্রথমে ভেবেছিল, এটা হয়তো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের ধোঁয়া। কিন্তু পরে সবাই বুঝতে পারে, এটি প্রকৃতিরই এক অনন্য শিল্প।’
সূত্র: ডন, জিও নিউজ



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন