মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:০২ এএম

সৌরবিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক 

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:০২ এএম

সৌরবিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক 

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, দীর্ঘদিন এই খাতটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়নের অভাবে পিছিয়ে থেকেছে। দীর্ঘদিন এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের বদলে সেটিকে রাজনৈতিক কারসাজি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নষ্ট করেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।

সোমবার রূপালী বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘সৌরবিদ্যুতে আওয়ামী সরকারের কারসাজি’ শিরোনামের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ আইনের অপব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে দলীয় আনুগত্যে প্রভাবিত হয়ে দরপত্র দেওয়া হয়েছে উচ্চমূল্যে। এই আইনের ছত্রছায়ায় প্রতিযোগিতা পরিহার করে পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিয়ে জনগণের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে জনগণের করের টাকা পরিকল্পিতভাবে লুটপাট করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল নীতি পরিবর্তন বা দরপত্র প্রক্রিয়া সংস্কার যথেষ্ট নয়; এই খাতে যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় আনা জরুরি।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে জবাবদিহিতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দেশের কৌশলগত উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই খাতে দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং তা জনগণের জীবনমান, শিল্পোন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

আশার কথা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিদ্যুতের বিশেষ আইন বাতিল করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। ফলে এই খাতের সব কাজই খোলা দরপত্রের মাধ্যমে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়া তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৪টি লটে প্রায় ৪০টি কোম্পানি আবেদন করেছে। যেখানে কিলোওয়াটপ্রতি উৎপাদন খরচ কমে এসেছে অর্ধেকেরও কম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের অধীনে এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) ইস্যু করা ৩১টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চাইতে উৎপাদন খরচ গড়ে ২১ শতাংশ কম। কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ১০ দশমিক ৪৭ সেন্ট (মার্কিন ডলার) থেকে কমে আট দশমিক ২৭ সেন্ট হয়েছে। 

যেহেতু বর্তমান সরকার উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, সেহেতু বোঝাই যাচ্ছে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে জনগণের টাকা পুকুরচুরি করেছে, সেই সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করা হোক।

এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি উচ্চপর্যায়ের বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠন করা, যেখানে নিরপেক্ষভাবে বিগত সরকারের আমলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন, দরপত্র ও ব্যয় কাঠামো বিশ্লেষণ করে দুর্নীতির মূল হোতাদের চিহ্নিত করা হবে।

আমরা মনে করি দেশের জনগণ ন্যায্যমূল্য ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ পাওয়ার অধিকার রাখে। সেই অধিকার হরণ করে যারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চেয়েছে, তাদেরকে শুধু নৈতিকভাবে দায়ী করলেই চলবে না আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায়, যা জার্মানির মতো উন্নত দেশ থেকেও বেশি। অথচ জার্মানি ২৫ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, আর আমরা মাত্র কয়েকশ মেগাওয়াটে আটকে আছি। এর মূল কারণ ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও রাজনৈতিক দুর্নীতি। তাই সৌরবিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, অতীতের অপকর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কেউ বিগত সরকারের মতো লুটপাট করার সাহস না পায়। 

ভবিষ্যতে এ খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং দীর্ঘমেয়াদে জনস্বার্থ রক্ষা করলেই বাংলাদেশকে জ্বালানি খাতে টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।  নীতি ও পরিকল্পনায় দৃঢ়তা, বিনিয়োগে স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি রোধের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার মূল ভরসা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!