বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ইতিবাচক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ইতিবাচক

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিময় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি বৈদেশিক বাণিজ্য। দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও ভবিষ্যৎমুখী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অনুবিভাগের সক্রিয় ভূমিকা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কৌশলে নতুন দিক উন্মোচন করছে। জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মরিশাস, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যে ধারাবাহিক বাণিজ্য চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য অঙ্গনে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং বহির্বিশ্বে দেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ/সিইপিএ) এখন শুধু পণ্যের বাজার বিস্তারের মাধ্যম নয়, বরং প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জ্ঞান বিনিময়ের এক সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ফলে শুল্ক সুবিধা হারানোর আশঙ্কা সামনে রেখে নতুন বাজার সৃষ্টি ও বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ এখন সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দূরদর্শী পদক্ষেপ।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এসব চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি হবে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং উৎপাদনশীল খাতেও আসবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। বিশেষত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করবে।

এ প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পুল’ গঠন ও ইলেকট্রনিক উৎপত্তি সনদ (সার্টিফিকেট অব অরিজিন) ইস্যু ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতি বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এখন কেবল পণ্যের লেনদেনেই সীমাবদ্ধ নেই; এটি একটি কৌশলগত সম্পর্ক, যার মাধ্যমে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কূটনীতি মিলেমিশে কাজ করে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এফটিএ ও ইপিএ আলোচনা কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার একটি মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত হওয়া উচিত।

বিশেষ করে আরসিইপির মতো বৃহৎ আঞ্চলিক চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা শুরু করাও অত্যন্ত সময়োপযোগী। একইসঙ্গে উৎপত্তি সনদ ইস্যুর প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগও প্রশংসার দাবিদার। এর মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত হবে, যা ব্যবসায়িক পরিবেশে আস্থা বাড়াবে।

তবে চুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, প্রতিটি চুক্তির শর্ত ও সুবিধা বিশ্লেষণে প্রয়োজন উচ্চমানের তথ্যনির্ভর গবেষণা ও প্রস্তুতি। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় শিল্প খাতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, প্রশাসনিক জটিলতা ও সমন্বয়ের অভাব যেন চুক্তিগুলোর কার্যকারিতা ব্যাহত না করেÑ সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পুল’ গঠনের মাধ্যমে একটি টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির দিকে এগোচ্ছে। এ উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতিকে আরও দক্ষ, ভবিষ্যৎমুখী ও বাস্তবভিত্তিক করে তুলবে।

বাংলাদেশ আজ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে বিশ্বে আরও প্রতিষ্ঠিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রায় একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অংশীদারিত্ব চুক্তি কেবল রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

আমরা আশা করব, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সঠিক দিকনির্দেশনা, গবেষণা ও বাণিজ্য কূটনীতির মাধ্যমে এই চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে, তবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হবে, যা হবে শক্তিশালী, টেকসই ও বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!