ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফিরোজা বেগমবিহীন ১১ বছর

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

নজরুল সংগীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ফিরোজা বেগম। তাকে বলা হয় উপমহাদেশের বাংলা সংগীতের প্রতীকীরূপ। তিনি সংগীতের বিভিন্ন শাখায় নিজের অনন্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে নজরুলসংগীতে তার অবদান অবিস্মরণীয়। যার ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আজ তাকে হারানোর দিন। ২০১৪ সালের এই দিনে ফিরোজা বেগম চিরতরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। ছোট বেলা থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন তিনি। তাই এই ভুবনেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন। ফিরোজা বেগম যখন মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন, তখনই তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান করার সুযোগ পান।

১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরোজা বেগমের গানে আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে তার গাওয়া ইসলামি গানের রেকর্ড বের হয়, যা শ্রোতাদের কাছে প্রশংসিত হয়। আত্মপ্রকাশের আগেই মাত্র ১০ বছর বয়সে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য পান ফিরোজা বেগম। এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের কাছ থেকে গানের তালিম নেওয়া এবং তাকে গান শোনানোর সৌভাগ্যও হয়েছিল তার। যেই নজরুল সংগীতের জন্য ফিরোজা বেগম বিখ্যাত, সেই সংগীতে তার প্রথম রেকর্ড প্রকাশ হয় ১৯৪৯ সালে। এরপর তিনি আরও বেশকিছু নজরুল সংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। বলা হয়ে থাকে, তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তার পাওয়ার পর থেকেই কবি নজরুলের গান নজরুলসংগীত হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে।

নজরুলসংগীত ছাড়াও ফিরোজা বেগম আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তার ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়। ফিরোজা বেগম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৮০টিরও বেশি একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বর্ণপদক তার অর্জনের খাতায় রয়েছে। এ ছাড়া নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কার, সিকোয়েন্স পুরস্কার, সেরা নজরুল সংগীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার), শ্রেষ্ঠ টিভি শিল্পী পুরস্কার (পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে), নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট ইত্যাদি সম্মাননাও রয়েছে তার ঝুলিতে। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ‘বঙ্গ সম্মান’য় ভূষিত হন ফিরোজা বেগম।

২০১৪ সালের আজকের দিনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিন কেবল তার দেহাবসান হয়েছিল। আদতে তিনি তো অমর, শ্রদ্ধায় চিরস্মরণীয়। তার আকাশসম অবদান সংগীত অনুরাগীদের কাছে পথ নির্দেশনা হিসেবে থেকে যাবে। আর তিনি অমর হয়ে থাকবেন সংগীত তথা নজরুল সংগীতের একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হয়ে।