ঢালিউড সিনেমার শক্তিমান অভিনেতা মিশা সওদাগর। সম্প্রতি চিকিৎসা শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি। চলতি সপ্তাহে অংশ নেবেন নতুন সিনেমার শুটিংয়ে। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুহুল আমিন ভূঁইয় ।
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, সবার দোয়ায় এখন ভালো আছি। কয়েক দিন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দেশে ফিরেছি। আপনারা সবাই জানেন, আমার পায়ের চিকিৎসা হয়েছে, যার কারণে কিছু দিন বিশ্রামে থাকতে হয়েছে। তবে আগের থেকে এখন ভালো আছি। কিন্তু দেশে ফিরেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে।
কেন?
হঠাৎ অঞ্জনা আপার মৃত্যুর সময়ের পুরোনো একটি ভিডিও ভাইরাল করে এক শ্রেণির দাবি, আমি নাকি আর নেই। এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর একটি বিষয়। সবাই কল করে খোঁজ নিচ্ছেন। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও কয়েকবার আমার সঙ্গে একই কা- হয়েছে। এটা নিন্দনীয় একটি কাজ। যারা এ ধরনের কাজে জড়িত তাদের বলতে চাই, দয়া করে এসব গুজব ছড়াবেন না। সামনে যদি কোনো কিংবদন্তি শিল্পীকে নিয়ে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়, তাহলে শিল্পী সমিতি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
ব্যস্ততা
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘তছনছ’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেব। এরপর আগামী মাসের ১৭ অক্টোবর থেকে কাজ করব মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘বিদায়’ সিনেমার। তারপর একই নির্মাতার ‘রাক্ষস’ করব ডিসেম্বরে। এর ফাঁকে দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’ সিনেমার বাকি অংশের শুটিংয়ে অংশ নেব। মোহাম্মদ ইকবালের ‘বিট্রে’ সিনেমার কাজ শেষ করব। আপাতত এ পাঁচ সিনেমা ঘিরে এবং শিল্পী সমিতি নিয়ে সব ব্যস্ততা।
চরিত্রের বৈচিত্র্য
আমি সব সময় চরিত্রে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করি। ‘বরবাদ’ ও ‘ইনসাফ’ সিনেমায় সেই পরিবর্তন দর্শক দেখেছে এবং তাদের ভালো লাগা জানিয়েছেন। যদিও দেশে না থাকার কারণে সরাসরি সেই প্রতিক্রিয়া মিস করেছি। তবে, ফেসবুকের মাধ্যমে সেসব প্রতিক্রিয়া দেখার সুযোগ হয়েছে। এ মুহূর্তে সিনেমার বরপুত্র শাকিব খান। প্রথমবার ওর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছি। যে কারণে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, কোন কারণে যদি চরিত্র ঝুলে যেত তাহলে দর্শক সেটি ভালোভাবে গ্রহণ করত না। যেহেতু শাকিবের বাবার চরিত্র ছিল, সেই জায়গা থেকে কিছুটা চাপ তো ছিলই। তবে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি মন থেকে সেরাটা দিয়ে কাজটি করেছিলাম বলেই দর্শক পছন্দ করেছেন। সিনেমাটি মুক্তির আগে ফোন করে শাকিবও প্রশংসা করেছিল।
শিল্পী সমিতির নতুন পরিকল্পনা
সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার নিয়ে ব্যতিক্রমী একটি আয়োজন করেছিল। ইনশা আল্লাহ, এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তার পাশাপাশি প্রতি মাসে অত্যন্ত একবার সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে সমিতিতে চা চক্রের আয়োজন করব। যেসব শিল্পী এখন অনেকটা ঘরবন্দি কিংবা কাজ করছেন না, তাদের জন্য একটি দিন প্রতি মাসে আমরা উপহার দিতে চাই। আড্ডা আর গল্পে তাদের মাতিয়ে রাখতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই আড্ডার আয়োজন হবে। তাদের থেকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে শিল্পী সমিতি এগিয়ে নিতে কাজ করব।
এফডিসিতে শিল্পী নেই
তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন প্রডাকশনই নেই। কাজ কমে যাওয়ার কারণে শিল্পীরা এফডিসিতে আসছেন না। এফডিসিতে আসতে গেলে মিনিমাম পাঁচ থেকে এক হাজার টাকা খরচ আছে। যাদের হাতে এ মুহূর্তে কাজ নেই তাদের জন্য এ টাকা খরচ করা কষ্টকর। আগে কাকরাইল, বিজয় নগরসহ যেসব জায়গায় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল, তা প্রায় সবই বন্ধ। সিনেমা এখন ঈদনির্ভর। তার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে প্রযোজক সমিতি অচল। বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমা নির্মাণ থেকে সরে গেছে অনেক আগেই। যে কারণে শিল্পীদের কাজও কম। আমরা সিনেমা ভালোবাসি। সিনেমার জন্য মন কাঁদে। অনেকেই লিখছেন, বেকার শিল্পীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে। কেনইবা যাবে না? দেশে কাজ কই? শিল্পীরা তাদের সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়, থাকতে চায়। কাজ না থাকলে তারা কি করবে? পরিবার নিয়ে বাঁচতে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। শিল্পীরা কাজ পাগল। একজন শিল্পীকে পরিপাটি থাকতে হয়। কাজ না থাকলে সেটা তো সম্ভব নয়। কাজ কম থাকার কারণে এফডিসিতে শিল্পীদের পদচারণা কম। তারপরও শিল্পী সমিতি চেষ্টা করছে শিল্পীদের এফডিসিমুখী করতে। সম্প্রতি শিল্পী সমিতি যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে। অনেক তারকা ও তার পরিবার শিল্পী সমিতির মিলনমেলায় অংশ নিয়েছে। প্রতিবছর আমরা এটি করব।
আগামীতে আপনার বিকল্প কে হবে?
এখন শিল্পী কই? কেউ পাঁচজন নায়ক, নায়িকা ও ভিলেনের নাম বলতে পারবে না। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এখন সিনেমাই হচ্ছে না। আমি যখন পুরোদমে কাজ করেছি তখন হাজারের বেশি সিনেমা হল ছিল। একটি সিনেমা তিনবার মুক্তি পেত। এখন কোন সিনেমা, কী লাভ করে জানি না। আমাদের আমলে অনেক প্রযোজক সিনেমা করে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। আর এখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই নেই। যেখানে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই নেই, সেখানে শিল্পী তৈরি হবে কীভাবে? বিকল্প তৈরি করতে হলে বছরে কমপক্ষে ১২-১৪টি বড় বাজেটের সিনেমা লাগবে। তাহলে নতুন শিল্পী তৈরি হবে। লাভের পাশাপাশি শিল্পটা ভালোবাসতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।
অ্যাওয়ার্ডে অশ্লীল পোশাক
ইদানীং তথাকথিত অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য বেড়েছে। এখন কারা অ্যাওয়ার্ড করে, কেন করছে; কে পাচ্ছে বোঝার উপায় নেই। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পীর জন্য বলতে চাই অ্যাওয়ার্ডে যাওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়ে যাবে। কারো জন্য যদি শিল্পী সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাহলে তার দায়ভার সমিতি নেবে না। মান বুঝে অ্যাওয়ার্ডে যেতে হবে। আজকাল অ্যাওয়ার্ডে তথাকথিত মডেলরা দৃষ্টিকটু পোশাক পরছে। বিষয়টা বিব্রতকর। সব মিলিয়ে বলতে চাই, এখন অ্যাওয়ার্ডের নামে যা তা হচ্ছে। অনেক সময় শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই ছবি ব্যবহার করে অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য করা হয়। শালীনতার মধ্যে সবকিছু থাকতে হবে। অনেক সিনিয়র শিল্পীরা জানিয়েছেন, তথাকথিত অ্যাওয়ার্ড এবং অশ্লীল পোশাক নিয়ে তারা বিব্রত।