ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক নৃশংস ঘটনার সময় ঢাকার আশুলিয়ায় নিজের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে তার দুই পায়ে গুলি চালায় এবং ওই সময় অভিনেতার মা ও স্ত্রী আহত হন। আহত অবস্থায় আজাদকে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে কাজে ফিরতে পারেননি।
বর্তমান তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে আজাদ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনি, স্নায়ুতে কিছুটা ক্ষত আছে। যেহেতু স্নায়ুতেও ক্ষত হয়েছে তাই একটু সময় লাগছে। তবে এখন নরমাল হওয়ার চেষ্টা করছি। একটু হাঁটাহাঁটি করা হয়। বাসায় বসে থাকতে বিরক্ত লাগে, তাই টুকটাক কাজ শুরু করেছি। আগে যেভাবে নিয়মিত শুটিং করতাম, এখন সেটা করা হয় না। একটু গ্যাপ নিয়ে কাজ করছি। যে চরিত্রগুলো ভালো, সেইগুলো করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার পর একটু মানসিকভাবে আতঙ্কে ছিলাম। এখনও যে পুরোপুরি কেটে গেছে বিষয়টা এমন নয়। আমি এবং আমার মা ও স্ত্রী সকলেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। সবার ভেতরে এখনও আতঙ্ক কাজ করছে। মাঝে মাঝে মনে ভেসে ওঠে ব্যাপারটা, তখন মানসিকভাবে খারাপ অবস্থায় থাকি।’
সেই রাতে অভিনেতার ছোট দুই মেয়ের কথা চিন্তা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রধারী ডাকাতদের সঙ্গে মোকাবেলা করেছিলেন বলে আজাদ জানান। সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়াজ পেয়ে আমার বাসার রান্না ঘরে গিয়ে ডাকাতদের যখন প্রথম দেখি, তখন দুইজন হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন অনুভব করলাম, ওরা যদি ভেতরে আসে বা জিম্মি করে, তখন খারাপ কিছু হতে পারে। আর যেহেতু তখন আমার মেয়ে উপরে ঘুমাচ্ছিল, তাই আমি মনে মনে ভাবলাম, যা কিছু হোক না কেন আমার উপরই হোক, কিন্তু আমি ওদের ভেতরে ঢুকতে দেব না। তখন আমি তাদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছি, তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল। যেহেতু তাদের হাতে পিস্তল ছিল, তাই তখন আমি তাদের হাত ধরে রেখেছিলাম যেন তারা গুলি করতে না পারে। তারপর এক পর্যায়ে তারা আমার ডান পায়ে প্রথম গুলি করে এবং বাম পায়ে দুইটি গুলি করে। এর পরের ঘটনা সকলের জানা।’
এ ঘটনায় সহকর্মী বা অন্যান্যরা পাশে ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ সকলেই আমার পাশে ছিল এবং খোঁজ খবর নিয়েছেন। এদিক থেকে আমি অনেক খুশি। অর্ণব ভাই এবং মনিরা মিঠু আন্টি তারা এসে দেখে গিয়েছিল। বাকি অনেকেই আসতে চেয়েছিল, তাদেরকে আমিই মানা করেছিলাম কারণ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ডিসিপ্লিন মেনটেইন করতে পারতেছিল না। বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই তপু খান ভাইকে। তিনি সেই পরিস্থিতিতে সবসময় আমার পাশে ছিল। সবকিছু তিনি দেখাশোনা করেছিলেন।’
আগের মতো আবারও কাজে নিয়মিত দেখা যাবে কবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমিও সেই অপেক্ষায় আছি। বাকিটা মহান আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। একটা গ্যাপ হয়ে গেলে নতুন করে আবার শুরু করতে হয়। আমার আসলে ওইখান থেকেই শুরু করতে হচ্ছে। যেহেতু এখনও পুরোপুরি সুস্থ নই, তাই আরেকটু সময় নেই, তারপর নিয়মিত কাজ শুরু করব। এর মাঝে কয়েকটি কাজ করা হয়েছে। তার মধ্যে টিভিসি, ওভিসি ও কয়েকটি নাটকেও কাজ করেছি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন