ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী কৃষিযন্ত্রের হাট। নতুন কৃষিযন্ত্রের দাম যেখানে আকাশছোঁয়া, সেখানে সাশ্রয়ী দামে পুরোনো যন্ত্র কিনে চাষাবাদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখছেন অসংখ্য কৃষক। মৌসুম শেষে কৃষকেরা তাদের ব্যবহৃত ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার ও থ্রেসার নিয়ে আসেন এই হাটে; অন্য কৃষকেরা আবার তা কিনে নিয়ে নিজের জমিতে কাজে লাগান। আধুনিক কৃষির যুগে এই হাট গরিব কৃষকের জন্য হয়ে উঠেছে এক বড় সহায়ক কেন্দ্র।
ঈশ্বরগঞ্জের মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারসংলগ্ন খোলা মাঠে সারি সারি সাজানো থাকে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, থ্রেসার মেশিনসহ নানা কৃষিযন্ত্র। এখানে নেই নির্দিষ্ট হাটবার; মৌসুম শেষে কিংবা জমি প্রস্তুতির সময় ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। শুধু নান্দাইল বা ঈশ্বরগঞ্জ নয়, পাশের ত্রিশাল, গফরগাঁও, হোসেনপুর, তাড়াইল ও গৌরীপুর থেকেও কৃষকেরা আসেন কম দামে যন্ত্র কিনতে।
নাউরী গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালিব বলেন, ‘নতুন পাওয়ারটিলার কিনতে গেলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু এই হাটে ৫০-৬০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। আমাদের মতো কৃষকের জন্য এটা বড় সহায়তা।’
নান্দাইলের চরশ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমানের অভিজ্ঞতাও একই রকম, ‘কম দামে কিনে কয়েক বছর ব্যবহার করে আবার এখানে বিক্রি করে দেওয়ার সুযোগ আছে। আগে কয়েকটি দোকান ছিল, এখন পুরো মাঠে কৃষিযন্ত্রের সারি। এটাকে আমরা গরিব কৃষকের হাট বলি।’
পুরোনো যন্ত্রপাতি বিক্রেতা হারুন মিয়া জানান, শুরুতে তিনি শুধু যন্ত্র মেরামতের কাজ করতেন। পরে কৃষকের চাহিদা দেখে পুরোনো ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার, থ্রেসার কিনে রাখা শুরু করেন। ‘মৌসুমে কৃষকেরা কম দামে কিনে নেন, আবার টাকার দরকার হলে বিক্রি করে দেন। এতে তাদের সুবিধা হয়, আমারও কিছু লাভ হয়।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান মনে করেন, পুরোনো কৃষিযন্ত্র কৃষকদের সাধ্যের মধ্যে থাকায় এটি সহায়ক উদ্যোগ। তবে তিনি ব্যবহারে দক্ষতা ও সচেতনতার ওপর জোর দেন।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। এতে গরিব কৃষকেরা সাশ্রয়ী দামে কৃষিযন্ত্র পাচ্ছেন। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকেও ভর্তুকিমূল্যে যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে।’
নতুন যন্ত্রের উচ্চমূল্যের ভিড়ে এই হাট যেন গরিব কৃষকের হাতে চাষাবাদের চাবিকাঠি তুলে দিচ্ছে, সাশ্রয়ী, ব্যবহারযোগ্য এবং সহজলভ্য সমাধান দিয়ে।