সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি ভাঙা সেতুর সংযোগ সাঁকো নির্মাণ করেছে শিক্ষার্থীরা। যমুনার চরে অবস্থিত চরগিরিশ ইউনিয়নের চরনাটিপাড়ায় গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি পাকা সেতুর সংযোগ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ বর্ষায় পানি বেড়ে সেই সেতু দিয়ে চলাচল একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
ঠিক এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সরকারি বরাদ্দ না আসার কথা জানানো হয়েছে। এই কথা শুনে শিক্ষার্থীরাই নিজ উদ্যোগে বানিয়েছে সাঁকো।
ওই গ্রামে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পূর্ব বাংলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের’ সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর সঙ্গে যোগাযোগ ঠিক রাখতে ধসে যাওয়া স্থানে সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েক বছর পূর্বে চরগিরিশ থেকে মনসুরনগর হয়ে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় যাওয়ার মূল রাস্তায় ওই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের দুই বছরের মাথায় বন্যার পানির তোড়ে সেতুটির পিলার মাটিতে দেবে যায়। সেতুতে ওঠার একপাশ দিয়ে পানি গড়ায় সেখানকার মাটি ধসে যায়। এর ফলে মূল সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
ওই সেতু ব্যবহার করে প্রতিদিন চলাচলকারী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, স্থানীয় কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে হেঁটে চলা সাধারণ মানুষদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।এ অবস্থায় সরকারিভাবে বরাদ্দ না এলে কাজ সম্ভব নয় বলে জানানো হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের সংগ্রহ করা টাকার বিনিময়ে কাঠ, বাঁশ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
পূর্ব কাজিপুর ছাত্র কল্যাণ পরিষদের শিক্ষার্থী এল ডব্লিউ রাসেল বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের বন্যার সময়ে চলাচলের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে সাঁকোটি নির্মাণ করি। এই কাজে স্থানীয় বিএনপির নেতা আয়নাল হক ও জামায়াত নেতা সাইদুর রহমান আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষার্থী বিপ্লব শেখ, নিরব তালুকদার, মুরাদ সামনে থেকে এই কাজ বাস্তবায়নে অংশ নেন।
শিক্ষার্থী নিরব শেখ বলেন, আমরা বাঁশ, কাঠ, পেরেক, সিমেন্টের খুঁটি ব্যবহার করে সাঁকোটির নির্মাণ কাজ মঙ্গলবার শেষ করেছি।
নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের দেখিয়ে দিল কীভাবে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কাজ করতে হয়। অনেক মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করে। সবার পক্ষ থেকে আমি এই শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আয়নাল হক বলেন, ওরা (শিক্ষার্থীরা) আমাকে এই উদ্যোগের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ওদের উৎসাহিত করেছি। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় কাজ।
কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শিক্ষার্থীদের সাঁকো নির্মাণের বিষয়টি শুনেছি। সরকারিভাবে ওই কাজের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন