ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

সারের কৃত্রিক সংকটে বিপাকে কৃষক

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

লালমনিরহাটে চলতি মৌসুমে টিএসপি, ইউরিয়া, ডিএপি ও এমওপি সার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে টিএসপি সারের সংকট সৃষ্টি করে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আমন মৌসুমে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

কৃষকদের দাবি, সরকারি দরে টিএসপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারাও ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টিএসপি সার বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ডিলার গোপনে গোডাউনে মজুত রেখে তৈরি করছেন। পরে এসব সার তামাক কোম্পানি ও তামাকচাষিদের কাছে অধিক দামে বিক্রির চেষ্টা চলছে। কৃষকেরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে সার না পেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ধানসহ অন্য ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবে। তারা মনে করেন, বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, পাটগ্রাম ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সরকার নির্ধারিত টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা থাকলেও কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আদিতমারীতে এর দাম পৌঁছেছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টিএসপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে নির্ধারিত দাম কেজিপ্রতি ২৭ টাকা।

রতিপুর গ্রামের কৃষক সন্তোষ কুমার রায় বলেন, ‘লালমনিরহাট কৃষিপ্রধান জেলা। আমন, বোরো, পাট, ভুট্টা চাষ করেই আমরা বাঁচি। এভাবে প্রতিবছর সারের দাম বাড়তে থাকলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।’ তিনি জানান, ছয় দোন জমিতে রোপা আমন চাষ শুরু করেছেন। টিএসপি না পেয়ে ইউরিয়া, ডিএপি ও এমওপি সার কিনে ব্যবহার করতে হয়েছে।

একই এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য সার বেশি দামে কিনতে পেরেছি। কিন্তু টিএসপি এখনো পাইনি। ডিলাররা বলছে, বাজারে নেই।’ চাঁদ মিয়া জানান, কয়েক দিন আগে তিনি এক বস্তা টিএসপি কিনেছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে। দাম বাড়ায় অন্য সার কিনতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক খুচরা সার বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা খুচরা রিটেইলার। ডিলারের কাছ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকার সার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পরিবহন খরচও থাকে। তাই বাধ্য হয়ে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করি। এতে আমাদের দোষ নেই।’

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী টিএসপির দাম প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০, খুচরা কেজিপ্রতি ২৭ টাকা। ডিএপি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০ (প্রতি কেজি ২১ টাকা), ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ (প্রতি কেজি ২৭ টাকা), এমওপি ১ হাজার (প্রতি কেজি ২০ টাকা)। অথচ বাস্তবে টিএসপি-ই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ইউরিয়া ও এমওপির ঘাটতি না থাকলেও টিএসপি সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ৫২ জন বিসিআইসি ও ৯২ জন বিএডিসি ডিলারের মাধ্যমে সার সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে জেলার জন্য ইউরিয়া ৬৮ হাজার ৯৩২ টন, টিএসপি ৩০ হাজার ২১০, ডিএপি ৪৫ হাজার ৩২০ ও এমওপি ৪৯ হাজার ৬১৬ টনের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরিয়া ৩৯ হাজার ৬৯০ টন, টিএসপি ১২ হাজার ৭০২, এমওপি ১৫ হাজার ৮৫৩ ও ডিএপি ২৩ হাজার ৫১১ টন বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরেফিন বলেন, ‘আমাদের বাফার গোডাউনে পর্যাপ্ত  মজুত আছে। জেলায় সারের কোনো অভাব নেই। এখন পর্যন্ত কৃষক পর্যায় থেকে দাম বেশি নেওয়া বা সংকটের অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেন, অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কৃষকেরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে সার না পেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ধানসহ অন্য ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবে। তারা মনে করেন, বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।