ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

সৌদিতে গিয়ে বিপাকে নেত্রকোনার ৬ যুবক, দালালের বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৯:০০ এএম

পরিবারের অভাব ঘোচাতে ভালো চাকরির আশ্বাসে ভিটামাটি বিক্রি করে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন নেত্রকোনার ৬ যুবক। তবে স্বপ্নের দেশে গিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কেউ দেশে তো টাকাই পাঠাননি, উল্টো পরিবার থেকেই তাদের খরচ পাঠাতে হয়েছে।

এরই মধ্যে ট্রাভেল এজেন্সির স্থানীয় এজেন্টের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক প্রবাসীর স্ত্রী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা হলেনÑ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বিলজোড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, আল-মামুন, মেহেদী হাসান, নুরুল আমিন এবং জারিয়া ইউনিয়নের মৌদাম চরপাড়া গ্রামের নূরে আলম আকন্দ ও আব্দুল মতিন তালুকদার।

এই ৬ জন সৌদি আরবে যান বিলজোড়া গ্রামের আলামিনের মাধ্যমে। আলামিন নিজেকে ‘রেডিয়েন্ট এমপ্লয়মেন্ট’ ও ‘খাদিজা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’-এর স্থানীয় প্রতিনিধি দাবি করেন।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মোট ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের বিদেশে পাঠানোর চুক্তি হয়। প্রথমে সিরাজুল ইসলাম, এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিলে বাকিরা সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সৌদি পৌঁছে পরিবারকে জানানো হয়, তারা ভালো চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কেউ দেশে টাকা পাঠাননি, বরং পরিবার থেকেই তাদের খরচ পাঠাতে হয়েছে। এ ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ছাবিনা আক্তার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয় এজেন্ট আল আমিন ভালো চাকরি ও দুই বছরের আকামা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়; কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবারে অর্থ পাঠানোর পরিবর্তে, উল্টো পরিবার থেকেই টাকা পাঠাতে হচ্ছে, যা প্রতারণার শামিল। অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় আকামা দেয়নি। কেউ কেউ ফিরেও এসেছে দেশে। অথচ সব বিক্রি করে প্রবাসে গিয়েছিল তারা।

প্রবাসফেরত ভুক্তভোগী নূরে আলম আকন্দ জানান, আমার সঙ্গে আল আমিনের কথার মাধ্যমে চুক্তি হয়, আমাকে আকামা করে দেবে ও মুদি দোকান অথবা রেস্টুরেন্টে চাকরি দেবে। এই বলে আমাকে পাঠিয়েছিল কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর আমার কোনো কথায় রাখে নাই, আমি তাকে সব কিছু বললেও সে কোনো প্রকার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। পরে আমি বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ১২ মাসের আকামা করি এর মধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে সে উল্টো আমাকে হুমকি দিতে থাকে এবং ওইখানে তার লোকের মাধ্যমে আমার ওপর মানসিক নির্যাতন চালায়। পরে আমি পালিয়ে দেশে ফেরত আসি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছুই মেলেনি।

এলাকাবাসী জানান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দুর্দশা চোখে পড়ার মতো। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত এজেন্ট আল আমিন বলেন, আমি নির্দোষ। এটি একটি প্রতিহিংসামূলক মামলা। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এজেন্সি স্বত্বাধিকারী রুবেল আহমেদ বলেন, নূরে আলমের ফিরে আসার বিষয়ে অবগত হয়েছি। কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবস্থাপক, খাদিজা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও রেডিয়েন্ট এমপ্লয়মেন্টের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। নূরে আলম অসুস্থ হওয়ায় তিনি দেশে ফিরেছেন।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।