ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

উত্তরের দরজায় কড়া নাড়ছে শীত

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম
লালমনিরহাটে শীত পড়তে দেখা দিয়েছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন শরৎকাল চলছে। দরজায় কড়া নাড়ছে হেমন্তের নবান্ন। প্রকৃতি এখন শান্ত ও নীরব। নদী-নালা, খাল-বিলের পানিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিনের বেলাতেও তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাচ্ছে। শীত আসতে আর দেরি নেই—এরই ইঙ্গিত দিচ্ছে সকালের কুয়াশা।

গত তিন দিন ধরে লালমনিরহাটে ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে দেখা মিলছে মিষ্টি রোদের। সবুজ ঘাস আর আমন ধানের পাতায় শিশিরবিন্দুর ঝলকানি মনে করিয়ে দিচ্ছে—শীত একেবারে দ্বারপ্রান্তে। শরতের বিদায় হতে না হতেই হেমন্তকে পাশ কাটিয়ে যেন আগাম আগমন বার্তা দিচ্ছে শীত।

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে সন্ধ্যা নামলেই শীত অনুভূত হচ্ছে। ভারতের হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় এখানকার আবহাওয়ায় আগাম শীতের আমেজ দেখা দিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশ থেকে যেন বৃষ্টির পানির মতো হিমেল হাওয়া ঝরছে।

সকাল ৭টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। ঝড়-বৃষ্টি আর খরার পর বইছে শীতল বাতাস। ফসলের মাঠে উঁকি দিচ্ছে নতুন চারা, যাদের পাতায় জমে থাকা শিশির ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু শীতলতা।

শীতের আগমনে প্রান্তিক চাষিরা এখন ব্যস্ত আগাম সবজি চাষে। প্রতিদিন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, টমেটো, লালশাক ও মূলাসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসলের চাষ চলছে পুরোদমে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা দেখা গেছে। গাছের ডগা ও ধানখেতেও শিশির জমে থাকতে দেখা গেছে।

রাতে এখন সব বয়সের মানুষ হালকা কাঁথা ও কম্বল ব্যবহার শুরু করেছেন। আগাম শীতের আগমন দেখে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন—পূর্ণ শীত মৌসুমে তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা এলাকার কৃষক আহেদুল ইসলাম ও রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘দুই-তিন সপ্তাহ আগেই আমরা বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল রোপণ করেছি। গেল এক সপ্তাহ ধরে আমাদের এলাকায় শীত পড়ছে। রাতে হালকা কাঁথা গায়ে দিতে হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠলে দেখি চারদিকে ঘন কুয়াশা, ঠান্ডাও লাগে। তবে মাঠে কিছুক্ষণ কাজ করলে ঠান্ডা কেটে যায়।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে দিনের তাপমাত্রা ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। টানা তিন-চার দিন ধরে কুয়াশা পড়ছে। এখনই কুয়াশা কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং দিন দিন তা আরও বাড়বে।’