*** রাজশাহী মহানগরী
*** বৃষ্টি হলে কাদা, আর শুষ্ক দিনে ধুলায় ভরে যায় সড়ক
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক খানাখন্দে ভরপুর হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, ভাঙছে সড়ক। ফলে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে, ঘটছে দুর্ঘটনাও। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে নগরবাসীর ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
চলতি বছর টানা বর্ষণ ও ভারি যানবাহনের চাপের পাশাপাশি উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে সড়কগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নিচের সড়কগুলো ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। বৃষ্টি হলে কাদা, আর শুষ্ক দিনে ধুলায় ভরে যায় সড়ক। এতে যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। নগরবাসীর দাবি, দ্রুত এসব সড়ক সংস্কার ও উড়ালসড়ক নির্মাণকাজ শেষ করার। ২৪ সালের ৫ আগস্টের পর উড়াল সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শুরু হলেও তা চলছে ধীরগতিতে। ওই সময়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। ১৯ আগস্ট করপোরেশনের দায়িত্ব নেন প্রশাসক। এরপর সংস্কার কাজও থেমে গেছে।
জানা যায়, নগরীর ভদ্রা থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। এই সড়ক নির্মাণ হয়েছে দুই বছর আগে। এরই মধ্যে সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে সে গর্তগুলো দেখা যাচ্ছে না। চলাচলে মনোযোগ হারালে ঘটে দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে আন্তঃজেলা বাসগুলো। ভারি যান চলাচলের কারণে এই সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। পারিজাত ও আরডিএ পার্ক পার হওয়ার পর সড়কে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কে বেশ কয়েকটি গর্ত দেখা গেছে।
চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, এই সড়ক আগে দুই লেনের ছিল। তখনো রাস্তায় বিশাল গর্ত ছিল। দুই বছর হলো এই সড়ক চার লেন হওয়ার। দুই বছরের মধ্যে এই সড়ক আবারও গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে মাঝেমধ্যে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতেও ভয় লাগে। ভদ্রা থেকে আমচত্বর পর্যন্ত পুরোটাই ভাঙা।
নগরীর বড় বনগ্রামের বাসিন্দা বারকাতুল্লাহ জানান, এই সড়কটি অন্য সড়কের মতো সুন্দর ছিল। কিন্তু দুই বছরও টিকল না। তদন্ত করা উচিত কেন এমন হলো। নির্মাণে দুর্নীতি হলে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নগরীর বেশ কিছু এলাকায় চলছে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ। সেসব এলাকার সড়কও চলাচলের প্রায় অযোগ্য। নগরীর বন্ধ গেট থেকে বিভাগীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই খানাখন্দ। কাদামাটিতে একাকার। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, এই সড়কটি প্রায় দেড় বছর থেকে এই অবস্থায় আছে। এখানকার বাসিন্দারা এই সড়ক ব্যবহার করতে পারছেন না। রিকশাচালকরাও এদিকে আসতে চান না। সিটি করপোরেশনের উচিত এই সড়ক দ্রুত সংস্কার করা। তাহলে এই সড়কে চলাচল করা মানুষের ভোগান্তি কমবে।
নগরীর ‘ঘোড়াচত্বর’ থেকে দাসপুকুর মোড়, চারখুটার মোড় থেকে কাশিয়াডাঙ্গা থানা পর্যন্ত সড়কও বেহাল দশায়। নিউমার্কেট থেকে গোরহাঙ্গা রেলগেট হয়ে শালবাগান পর্যন্ত সড়কে প্রায় দুই বছর ধরে চলাচল করা দুষ্কর। ধীরগতিতে উড়ালসড়ক নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।
একটি সরকারি দপ্তরে কর্মরত মেহেদি হাসান বলেন, আমাকে সপ্তাহে পাঁচ দিন রেলগেট দিয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। উড়ালসড়কের নিচে সড়কটিও একেবারে ছোট হয়ে গেছে। এই ছোট জায়গাতেই বাস আর সিএনজি স্ট্যান্ড করা হয়েছে। আর এতেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড সরিয়ে নওদাপাড়াতে করলে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা সহজ হবে। আর সড়কটিও সংস্কার করা খুব প্রয়োজন হয়ে গেছে।
এসব বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, নগরীর সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মাঠপর্যায়ে জরিপ শেষে সংস্কার কাজের টেন্ডার করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।