ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

১০০ বছর কাটল কেউ কথা রাখেনি!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৭:০৬ এএম
গ্রামবাসী
  • নলডাঙ্গার রায়সিংহপুরে বর্ষার পানি, ভাঙছে জীবন ও সম্বন্ধ

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছন্দে যেমন বলা হয়, ‘১০০ বছর কেটে গেলো, কত নেতা-জনপ্রতিনিধি আইলো গেলো, কেউ কথা রাখলো না। দাদা গেল, বাপ গেল, আমরাও চলে যাওয়ার পথে’ ঠিক তেমনই নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের রায়সিংহপুর গ্রামের মানুষের বর্ষার দুঃস্বপ্ন রয়ে গেছে।

মাত্র ৩০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা না থাকার কারণে শতাধিক পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে সমস্যা জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বারবার আশ্বাস দিয়েও কেউ কথা রাখেনি।

রাস্তায় পানি জমে পাত্র-পাত্রীর পরিবার আসতে রাজি হন না। ফলে বহু বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, ছেলেমেয়ে যোগ্য ও গুণী হলেও রাস্তার অভাবে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে না।

গ্রামবাসী বলেন, ‘বর্ষায় পানি মাড়িয়ে চলাচল করা আমাদের জন্য চরম কষ্ট। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে কোলে বা খাটিয়ায় করে নিতে হয়। ভোটের আগে আশ্বাস দেন, কাজ করার কথা বলেন, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।’

রায়সিংহপুর পূর্বপাড়ের মানুষ জানায়, পানিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের বই ও ইউনিফর্ম নষ্ট হয়। অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারছে না। এ ছাড়া রোগীকে হাসপাতালে নিতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স বা রিকশা-ভ্যানও ঢুকতে পারছে না।

রাস্তা না থাকায় কৃষকেরা সময়মতো ফসল বাজারজাত করতে পারছেন না। ফলে তাদের ফসল ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্ষার সময়ে কাদা-মাটি ও পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়, যা জনজীবন ও কৃষিকাজ দুই ব্যাহত করছে।

গ্রামবাসী দীর্ঘদিন সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। গত রোববার তারা পানিতে নেমে মানববন্ধন করেছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা মজিবর রহমান মধু, মালেক ব্যাপারী, সুকচান ম-ল, রহিম ম-ল, আলিম ব্যাপারী, আবু বক্কর সিদ্দিকসহ অন্যান্য গ্রামবাসীও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান বলেন, ‘আগামী বরাদ্দে রাস্তাটি নির্মাণ করা হবে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

গ্রামবাসী মনে করছেন, দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে বর্ষার শুরুতেই তাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে। তারা আশা করছেন, দ্রুত রাস্তা নির্মাণ হলে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও সামাজিক জীবন স্বাভাবিক হবে।