ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা শেষে কর্মচঞ্চল সুন্দরবন

আব্দুল মোমিন সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম
সুন্দরবন

*** জীবিকার তাগিদে সুন্দর বনে বাওয়ালি, মৌয়াল ও জেলেরা

নদীতে কুমির জঙ্গলে বাঘ, আর বনে জলদস্যু এসব ভয়কে পেছনে ফেলে দীর্ঘ তিন মাসের কষ্টের দিন শেষ করে গতকাল সোমবার থেকে বন বিভাগের পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন, বাওয়ালি, মৌয়াল ও পর্যটকরা। কেউ গোলপাতা কাটতে নৌকা নিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে বনাঞ্চলে ডুকছেন, জেলেরা নদীতে মাছ ধরার জন্য ট্রলার নিয়ে বনে প্রবেশ করছেন। জীবিকা ফিরে পাওয়ার আনন্দ বনজীবীদের মধ্যে, ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। স্থানীয় জেলে ও বাওয়ালিদের মুখে এখন স্বস্তির হাসি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জেড এম সেলিম জানান, সাতক্ষীরায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৭৯ জন জেলেকে দুই দফায় মোট ৯১৪ টন চাল (প্রতি জেলে ৪০ কেজি) মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এসিএফ ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকৃত জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দে দুই কিস্তিতে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

জানা যায়, বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে জলভাগ রয়েছে ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ফজলুল হক বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সোমবার থেকে জেলে, বাওয়ালি ও পর্যটকরা আবার প্রবেশ করতে পারবেন।’

কিন্তু নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে অনেক জেলেরা অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রকৃত জেলেরা বনে না গেলেও অসাধু চক্র বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিষ দিয়ে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করেছে। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

শ্যামনগরের জেলে সুধান জানান, ‘তিন মাস খুব কষ্টে কেটেছে। আয়ের উৎস সুন্দরবন হওয়ায় বিকল্প কোনো কাজ থাকে না। ধারদেনা করে চলতে হয়েছে।’

গাবুরার বনজীবী ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা দরিদ্র মানুষ। নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনো সহায়তা পাই না। অনেকেই সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালিয়েছেন।

বন বিভাগের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে গত মৌসুমে মোট ২ হাজার ৯০০ বিএলসি (ব্লক) রয়েছে। এর মধ্যে, ১১৭০ বিএলসিতে ১২ হাজার ২৩৭টি পাস নিয়ে মাছ ধরতে গেছেন ৩২ হাজার ৭১১ জন জেলে। ১৭২২ বিএলসিতে ১৯ হাজার ৫৩২টি পাস নিয়ে কাঁকড়া ধরতে গেছেন ৪৪ হাজার ৩৫০ জন জেলে। ভ্রমণের জন্য ৯১টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের বিএলসিতে ৪৫ হাজার ৫৩৯ জন দেশি পর্যটক ও ৭০ জন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করে।

বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, গতকাল সোমবার থেকে জেলে, বাওয়ালি ও পর্যটকদের জন্য সুন্দবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে মোট ২ হাজার ৯৭০টি পাসপারমিট নবায়ন করা হয়েছে। নবায়নকৃতরা সরকারি রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।