ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টার্গেটে প্রবাসীদের বাড়ি

ডাকাত শঙ্কায় নির্ঘুম রাত

আব্দুল আহাদ, সিলেট
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:১৫ এএম
ডাকাত
  • বিভিন্ন এলাকায় প্রায় একই কৌশলে ডাকাতি হচ্ছে
  • সিসিটিভি ও প্রহরী নেই, পুলিশ টহল দুর্বল
  • ওসি বলছেন, সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত, তদন্ত চলছে

সিলেটে ডাকাতরা এবার টার্গেট করে নামছে। তাদের নিশানা এখন প্রবাসীদের বাড়ি। শহর ও গ্রামের যেসব বাড়ি প্রবাসীদের, সেসব বাসাবাড়ির ওপর চোখ তাদের। এরই মধ্যে শহর ও আশপাশের কয়েকটি প্রবাসীর বাড়িতে হানা দিয়েছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। একের পর এক ডাকাতির এমন ঘটনায় বাড়ছে জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। সর্বশেষ সোমবার ভোররাতে শাহপরাণ থানার দাসপাড়ার নোয়াগাঁও গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কমর উদ্দিন কলমদর আলীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুট করা হয়েছে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ভোররাত ৩টার দিকে মুখোশধারী ৮-১০ জনের একটি ডাকাতদল গেট ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। তারা সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। বাধা দিলে কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। যাওয়ার সময় ডাকাতরা কয়েকটি গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী কমর উদ্দিনের বড় ভাই আবদুল কাদির বলেন, ‘ওরা যে কেমন ভয় দেখিয়ে ঢুকেছে, সেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না। একেকজনের হাতে একেক ধরনের অস্ত্র। আমার ছোট ভাই বিদেশ থেকে ফিরেছে, এটা আগেই বুঝে ওদের কেউ তথ্য দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের গলায় ছুরি ধরে সব স্বর্ণ নিয়ে যায়। নগদ টাকাও ছিল। পুলিশ এসেছে, কিন্তু আমরা জানি না কিছু আদৌ হবে কি না।’

এ ঘটনা সিলেটে নতুন নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরে জেলার প্রবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় প্রায় একই কৌশলে ডাকাতি হয়েছে।

শুধু চলতি বছরেই ওসমানীনগরে এক রাতে তিনটি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। লুট হয় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার মালামাল। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বালাগঞ্জে এমন ঘটনায় অনেক পরিবার এখন প্রবাসীদের দেশে ফেরার আগে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন।

স্থানীয়দের দাবি, এসব ঘটনায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত, যারা প্রবাসীদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য জানে এবং পরিকল্পিতভাবে বাড়িগুলো টার্গেট করে।

দাসপাড়ার স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ বলেন, ‘এ এলাকায় অনেক প্রবাসীর বাড়ি। কিন্তু কোথাও সিসিটিভি নেই, নাই প্রহরী। অনেকেই ভেতরে টাকা-পয়সা রাখেন, কিন্তু নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।’

পুলিশি টহলের ঘাটতির কথাও বলছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, প্রবাসীদের টাকায় গড়া বাড়িগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

শাহপরাণ থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তথ্য সংগ্রহ চলছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের কাজ বলে ধারণা করছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে যেসব ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই অমীমাংসিত। ফলে পুলিশের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘প্রবাসীদের বাড়িতে বারবার ডাকাতির ঘটনা কেবল অপরাধ নয়, এটা একটি নিরাপত্তা বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। সিলেটের মতো প্রবাসী নির্ভর অঞ্চলে আলাদা নিরাপত্তাব্যবস্থা, প্রবাসী তথ্যভিত্তিক গোয়েন্দা নজরদারি এবং এলাকাভিত্তিক নজরদারির উদ্যোগ দরকার।’

সিলেট শহরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মো. আজিজুল হক বলেন, ‘প্রতিবার দেশে এলেই ভয় লাগে। বাড়িতে মা-বাবা একা থাকেন। পুলিশে জানালে বলে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল দেখি না। আমরা ট্যাক্স দিই, বিদেশ থেকে টাকা পাঠাই, অথচ নিজের বাড়িতেই নিরাপদ নই, এটা হতাশাজনক।’

এদিকে ডাকাতির সঙ্গে সঙ্গে সিলেট শহরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরির ঘটনাও। এসব ঘটনার পর ভোগান্তি এড়াতে কেউ আইনের আশ্রয়ও নেন না। গত সোমবার রাত সিলেট নগরীর মিরেরময়দান এলাকার কেওয়াপাড়ায় এক বেসরকারি চাকরিজীবীর বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ পাড়ায় প্রায়ই এমন চুরি হয়ে থাকে। পাশেই পুলিশ লাইনস থাকার পরও নিয়মিত চুরির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।