- নিবন্ধনবিহীন প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবাধ চলাচল
- ফুটপাত হকারদের দখলে, ফলে পথচারীদের মূল সড়কে নামতে হচ্ছে
- এক কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগছে ২০-৩০ মিনিট
প্রতিদিন সকাল থেকেই কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়সহ প্রতিটি মূল সড়কে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে সারি সারি অবৈধ ইজিবাইকের। যাদের এই নগরীতে চলাচলের বৈধ কোনো অনুমতি নেই। হর্নের কর্কশ শব্দ ভেসে আসছে চারপাশে, কিন্তু গাড়িগুলো প্রায় থেমে থেমে চলছে। অফিসগামী মানুষ, স্কুলের শিশুরা সবার মুখে অস্থিরতার ছাপ। ফুটপাত দখল হয়ে আছে, হকার ও দোকানের পসরা সাজিয়ে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে একশ্রেণির অসাধু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী।
সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় নগরীর রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, চকবাজার ও শাসনগাছ রেলগেটের প্রধান সড়কগুলো সকাল থেকেই যানজটের কবলে। পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে চলাচল করছেন। এতে গাড়ির গতি থেমে থেমে চলে। সড়কের দুই পাশে পার্কিং স্থাপন করা হয়েছে যত্রতত্র। অটোরিকশা যাত্রী উঠানামায় ব্যস্ত, সরকারের উপর পার্কিং করে প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে আছে। পণ্যবাহী ভ্যান লোড-আনলোড করছে।
রাজগঞ্জ থেকে আদালতপাড়া যেতে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। সিএনজি চালকরা বিকল্প গলি ব্যবহার করলেও সেখানে ভিড়ের শেষ নেই। ছোট ইজিবাইক বা মোটরসাইকেল মাঝেমধ্যেই চলতে পারছে না।
নিয়মিত দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। বাজারে আসা মানুষের ভিড়, পণ্যবাহী ভ্যান, ইজিবাইক ও রিকশা রাস্তার চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেয়। চকবাজার থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের বেশি। অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু গাড়িগুলো সরতে পারে না।
বিকেল ৩টার পর স্কুল ও কলেজ ছুটির সঙ্গে সঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থী এই নগরীর সড়কে নেমে আসে। অভিভাবকরা গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। এতে সড়কের অর্ধেক জায়গা বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করলেও জনবল সীমিত হওয়ায় তা পর্যাপ্ত হয় না। অনেক রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায় না।
অথচ প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা বা নির্দিষ্ট সড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষ হলেই আগের চিত্র ফিরে আসে। নগরে প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে, যার বড় অংশ নিবন্ধনবিহীন। সংকীর্ণ সড়ক ও পার্কিংয়ের অভাবে যানজটের চাপ আরও বাড়ছে। বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় মানুষ ছোট যানবাহনের ওপর নির্ভর করছে।
নগরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার সড়ক নকশা তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ কম ছিল। বর্তমানে শহরের জনসংখ্যা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম কয়েকগুণ বেড়েছে, কিন্তু সড়কের প্রস্থ বা বিকল্প রুট বাড়েনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালতপাড়া, বাজার, সব একই এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় একই সড়কে চাপ থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়।
যানজটে আটকে থাকা মানে শুধু সময় নষ্ট নয়। অফিসগামীদের দেরিতে পৌঁছানো, শিক্ষার্থীদের ক্লাস মিস করা এবং রোগীর হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছানোএগুলো সবই দৈনন্দিন ঘটনার অংশ। ফুটপাত দখল ও গাড়ির চাপ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
কুমিল্লা মহিলা কলেজের শিক্ষক আসলাম আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও যানজট কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
রাস্তায় বিকল্প গলি ব্যবহার করলেও সেগুলোও ভিড়ের কারণে কার্যকর হচ্ছে না। গাড়ি দাঁড়ানো, পণ্য সরবরাহ ও মানুষ চলাচলের জন্য সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে অফিস, ক্লাস ও হাসপাতাল যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মো. পারভেজ বলেন, ‘আমাদের এখানে লোকবলের তীব্র সংকট। ৭৯ জন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, যেখানে অন্তত ২০০ জন ট্রাফিক সদস্য প্রয়োজন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি, কুমিল্লা নগরীরকে সুশৃঙ্খল এবং সুপরিকল্পিত একটি বসবাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলব’।