ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার চিন্তা

পুরোনো গাড়ি তুলে নতুন  গাড়ি আমদানির উদ্যোগ

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
আমদানি

সড়ক পরিবহন খাতে নতুন যুগে প্রবেশ করতে চায় সরকার। এ জন্য সড়ক-মহাসড়ক থেকে ইকোনমিক লাইফ উত্তীর্ণ মোটরযান প্রত্যাহার ও নতুন গাড়ি আমদানির প্রস্তাব করা হবে।

দেশের সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এবং যাত্রীসেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০২৫ সালের ১৯ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। এই সংখ্যাটি সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছে। 

সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বিশেষ সুবিধার আওতায় মোটরযান মালিকদের জন্য যৌথভাবে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলোÑ ইকোনমিক লাইফ উত্তীর্ণ মোটরযানগুলোকে সড়ক-মহাসড়ক থেকে প্রত্যাহার করা এবং তার স্থলে পরিবেশবান্ধব নতুন গাড়ি আমদানি করা।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী, বাস ও মিনিবাসের জন্য ইকোনমিক লাইফ ৪০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী মোটরযানের জন্য ২৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। এ মেয়াদ শেষ হলেই এসব যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। এর ফলে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, দেখা দিচ্ছে নানা বিশৃঙ্খলা। উপরন্তু যাত্রীসেবার মানও নেমে গেছে নিচে।

২০২৩ সালে তৎকালীন সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন উঠিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পরিবহন মালিকদের চাপে তিন মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারও যে এ ক্ষেত্রে সফল হবে, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে নাÑ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আলোচনার সময় উল্লেখ করা হয়, দেশের পরিবহনব্যবস্থা গতিশীল করার জন্য ইকোনমিক লাইফ উত্তীর্ণ মোটরযানকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা প্রয়োজন। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি পরিবেশের অবনতি রোধ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই উদ্যোগের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং তারা দাবি করেছেন, সরকার বিনা সুদে ঋণ এবং শুল্ক মওকুফ সুবিধায় নতুন বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইমমুভার আমদানির অনুমতি দিলে এটি কার্যকর হবে। ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কে নতুন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং এটি যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিগগিরই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহন মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। সভায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

এই প্রয়াসগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে, যেখানে পরিবহন শিল্প আন্তঃসংযোগে আরো বেশি সক্ষম হবে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের জন্য ভালো সেবা নিশ্চিত করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মোটরযান মালিকদের জন্য স্বল্প সুদের ঋণের প্রাপ্তি এবং নতুন গাড়ি আমদানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা পরিবহন খাতে গতি, নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে।

আগামী দিনে সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে বাংলাদেশের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন দেশের পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সড়কগুলোকে ধাপে ধাপে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনশূন্য করে ফেলার কার্যক্রম চলছে। অবশ্য গত বছরের অক্টোবরেই বলা হয়েছিল, এ বছরের মে মাস থেকে সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পরও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।