ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রূপালী প্রতিবেদক

ঢাকার বাজারে সবজির আকাল, দামেও নাকাল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:২০ এএম
সবজি
  • বাড়তি দামে বিক্রি আটা, মাছ ও মসুর ডাল
  • আমদানি হলেও কমেনি পেঁয়াজের দাম
  • শুধু আলু ও কাঁচা পেঁপের দাম কম

ঢাকার বাজার প্রায় সবজিশূন্য। যা কিছু মিলছে, সেগুলোর বেশির ভাগের দাম শতকের ঘরে। দোকানের ডালিতে থরে থরে সাজানো সবজিও নেই। প্রায় তিন মাস ধরেই সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি বলে জানালেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, আটা, মাছ ও মসুর ডাল। আমদানি হলেও কমেনি পেঁয়াজের দাম।

বিক্রেতারা বলছেন, ভাদ্র মাস প্রায় শেষের দিকে। গ্রামে শেষরাতের দিকে টুপটাপ করে ঝরে শিশির। শীতের সবজি আসি আসি ভাব। যার কারণে ঢাকার বাজারে সবজির প্রবল ঘাটতি। তবে এবারের ঘাটতিটা একসঙ্গে চাপ দিয়েছে। অন্যদিকে ভোক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, বাজারে শুধু আলু ও কাঁচা পেঁপের দাম কম। দুটি পণ্য ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই ৮০ থেকে ১০০ টাকা বা তারও বেশি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকার মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হারিস বলেন, সবজির দাম বাড়তি থাকায় ব্যবসা কমেছে। দাম বেশি, যার কারণে লোকে কিনছে কম। যারা কেনেন তারাও এখন আধা কেজি করে সবজি কিনছেন। আধা কেজি করে সবজি কেনা ক্রেতার সংখ্যা এখন বেশি। তিনি বলেন, আগে সারা দিনে এক আইটেম সবজি ২০ কেজি বিক্রি করতাম, এখন সারা দিনে বিক্রি হয় ৫ কেজি। 

ঢাকার মগবাজারের রেলগেটে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা আসমত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে কিছু সবজি কিনেছি। বিক্রি করে চালান তুলতে পারিনি। যার কারণে আজকে (গতকাল) আমড়া নিয়ে বের হয়েছি।’

মগবাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আরও কয়েক দিন সবজির দাম বাড়তি থাকবে। কারণ, এখন বেশির ভাগ সবজির মৌসুম শেষ। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তি থাকবে। চাহিদার তুলনায় এখন বাজারে সবজির সরবরাহ অনেকটাই কম।

কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজি পটোল ৮০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা, প্রতি কজি পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বরবটি ১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শাসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবজির অতিরিক্ত দাম যাচ্ছে। ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজি নেই। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এত দামে সবজি কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

মালিবাগ বাজারে পণ্য কিনতে আসা অটোরিকশাচালক সুমন হোসেন জানান, এক বেলায় তার ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। পুরো টাকা দিয়ে এক দিনের বাজার হয় না। চাল-তেল কেনার পর মাছ বা মাংস কিনতে গেলে সবজি নিতে পারেন না তিনি। 

রাজধানীর মালিবাগ ছাড়াও রামপুরা ও মেরুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম এখনো বাড়তি। অবশ্য গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৭২-৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইলের দাম ৭৫-৯৫ টাকা। এ ছাড়া ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে প্যাকেটজাত আটা কোম্পানিভেদে ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। খোলা আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে ভালো মানের মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার অন্য বাজারগুলোতে তার দাম উঠেছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। প্রতি প্যাকেট চায়ের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।

আমদানি বেশি হলেও পেঁয়াজের দামে সেভাবে কমেনি। এখনো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। যদিও কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। যেখানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে রসুনের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৫০-১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যে। সোনালি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহেও একই দামে এগুলো বিক্রি হয়েছে। 

অন্যদিকে, মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা দরেÑ বলেন কিচেন মার্কেটের বিক্রেতা উজ্জ্বল মিয়া। মাছের দাম বাড়তির দিকে বলেন হোসেন আলী। তিনি বলেন, প্রতি কেজি বড় রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকার বেশি দরে। যেখানে গত মাসে দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩৬০ টাকা পর্যন্ত। বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা দরেÑ বলেন তিনি।