- ঘোষ পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে দই উৎপাদনের সূচনা
- বর্তমানে দুপচাঁচিয়ায় ১২-১৫টি দই কারখানা, প্রায় ১৫০ জন কর্মচারী
- প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ মণ দই উৎপাদন; মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার লেনদেন
বগুড়াকে বলা হয় ‘দইয়ের রাজধানী’। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে দুপচাঁচিয়া দইয়ের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্য বহন করা এই দই স্বাদ ও গুণে অতুলনীয়। সামাজিক ভোজ, উৎসব কিংবা পারিবারিক আয়োজনে শেষ পাতে দই না হলে যেন আয়োজনই পূর্ণ হয় না।
সম্প্রতি এই ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই অর্জন করেছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৬ জুন বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেয়। এতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সামনে।
ঐতিহাসিকভাবে দুপচাঁচিয়ায় ঘোষ পরিবারের সদস্যরা, হারান ঘোষ, পঞ্চ ঘোষ, খোকা ঘোষ, নারায়ণ ঘোষ, নরেন ঘোষ ও কালু ঘোষ প্রথম দই উৎপাদন শুরু করেন। শুরুতে টক দই বেশি জনপ্রিয় থাকলেও সময়ের সঙ্গে চিনি মেশানো মিষ্টি দই বাজার দখল করে নেয়। বর্তমানে টক ও মিষ্টি, এই দুই ধরনের দই উৎপাদন হয়।
উপজেলা সদরের দই ব্যবসায়ী পলাশ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকে ঐতিহ্য রক্ষা করে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার। দুপচাঁচিয়ার দই শুধু বগুড়া নয়, আশপাশের জেলাতেও সমান জনপ্রিয়।’
দই ব্যবসায়ী জয়দেব ঘোষ জানান, ‘দুধ ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দইয়ের দাম বাড়লেও আসল স্বাদের দই পেতে হলে দুপচাঁচিয়ার বিকল্প নেই।’
জয়পুরহাট থেকে আসা ক্রেতা মুনির হোসেন বলেন, ‘ভালো দইয়ের খোঁজে প্রায়ই দুপচাঁচিয়া বাজারে আসি। এখানকার দইয়ের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।’
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মমতা সাহা জানান, দুপচাঁচিয়ার বেশিরভাগ দোকান সরকারের নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে। তবে ভেজাল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।
জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে বগুড়ার দইয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিললেও ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে হলে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বগুড়ার দই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।