ফরিদপুরে সংসদীয়-৪ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার সকাল ও বিকেলে দুই দফায় বিক্ষোভ পর ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অবরোধ তুলে নেয় স্থানীয় লোকজন। এতে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল আবার শুরু হয়।
এর আগে ফরিদপুরে সংসদীয়-৪ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদে গতকাল সকালে ভাঙা গোল চত্বরে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষাভ করেন স্থানীয় মানুষ। এতে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভের ৫ ঘণ্টা পর জুমার নামাজের সময় সড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা। এরপর থেকে মহাসড়ক দুটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে বিকেল ৪টার দিকে ফের এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন হাজারো মানুষ। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। এতে দুই মহাসড়কের উভয় মুখে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
জানা গেছে, ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রথম অবরোধ শুরু হয়। সকাল ৯টার মধ্যে হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ, মাধবপুর ও পুকুরিয়া এলাকায় শত শত মানুষ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুকুরিয়া, সোয়াদি ও মনসুরাবাদসহ বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন।
৫ ঘণ্টা পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের অনুরোধে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। জুমার নামাজের সময় সড়ক থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা, ফলে মহাসড়ক দুটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ সময় ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, ইসির নতুন সীমানা তালিকায় আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। আমি আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দিয়েছি এবং তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। দ্রুত সমাধানের আশা রাখছি।
অবরোধ প্রত্যাহার করা হলেও আগামী সোমবারের মধ্যে ভাঙ্গার বিভাজন বন্ধ না হলে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান জানান, নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা আর সড়ক অবরোধ করেনি। সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মহাসড়কে মোতায়েন রয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুরের দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে বেলা সোয়া ১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেন বাংলাদেশ কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শহিদুল ইসলাম।
শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ভাগ আমরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেব না। প্রয়োজনে বিভাজন রোধে আমি ব্যক্তিগতভাবে আগামী রোববার কোর্টে যাব। আমাদের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট। আমরা একতাবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনৈক্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের এ আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে সবার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসির এ সিদ্ধান্ত তাদের স্বার্থের পরিপন্থি এবং অযৌক্তিক। তারা আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ফরিদপুর-৪ আসনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে জুমার নামাজের পর অবরোধ প্রত্যাহার করা হলেও বিকেল ৪টার দিকে ফের এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় দুই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের অবরোধে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ভাঙ্গার এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকবে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেল ৪টার দিকে হাজারো লোকজন ভাঙ্গা গোল চত্বরে বসে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দুটি ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চারটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘আমার মাটি আমার মা, ভাঙ্গা নগরকান্দায় যাবে না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, আলগীবাসী জেগেছে’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দিব, ভাঙ্গার মাটি ছাড়ব না’ ইত্যাদি সেøাগান দেন।
অবরোধের কারণে এ সময় দুটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দূরপাল্লার বাস, মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ভাঙ্গা থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গা গোলচত্বরে দুটি মহাসড়কের প্রবেশমুখ স্থানীয় লোকজন অবরোধ করে রেখেছেন। এতে প্রচ- গাড়ির চাপ তৈরি হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। এখনো অবরোধকারীরা মহাসড়ক ছাড়েননি।