ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুই বছরেও শেষ হয়নি ওভারপাস নির্মাণকাজ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

*** নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় দুর্ভোগে স্থানীয়রা
*** যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় নানা দুর্ঘটনা

পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখন তাতে ভর করেছে অনিশ্চয়তা। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরে শেষ হয়নি। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া ওভারপাস নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় নানা দুর্ঘটনা।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ জুন একনেকের বৈঠকে শহরের রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা।

আনুষ্ঠনিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরেও শেষ হয়নি ওভারপাস নির্মাণকাজ। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাকচালক হাসেম আলী বলেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা জীবিকা নির্বাহকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলছে।

মোটরসাইকেল চালক আ. রহিম  বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল এই ওভারপাস। আমরা ভেবেছিলাম ভোগান্তি কমবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় বরং ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

রিকশাচালক আতিয়ার রহমান  বলেন,  প্রতিদিনই আমাদের এই রাস্তায় যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যাত্রীদের নিয়ে  যাতায়াতে চরম ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।

নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচলের কারণে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা রেলগেট বন্ধ থাকে। এতে শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এজন্যই এ ওভারপাস ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।

তথ্য অনুযায়ী- চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাসের নকশার র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রথমে ৩৩০ মিটার ধরা হয়েছিল। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। ফলে নতুন করে সংশোধিত নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নতুন নকশায় দু’প্রান্তের র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে আরও ১০২ মিটার।  এর ফলে অতিরিক্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রথমদিকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ, নকশায় ত্রুটি, বিদ্যুৎ ও রেল কর্তৃপক্ষের খরচ বাড়া এবং সার্ভিস সড়ক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরাও দায় স্বীকার করছেন।

এ বিষয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই) অফিসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কাজের বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)।