** প্রতিদিন খাল সাঁতরে পারাপার হচ্ছে এলাকাবাসী
** বিদ্যালয়ে যাওয়া কমে গেছে শিশু-শিক্ষার্থীদের
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার পশ্চিম চরঘাসিয়া গ্রামের চান্দার খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে ভুগছেন। প্রতিদিন খাল সাঁতরে বা পানি মাড়িয়ে পারাপার করতে হয় এলাকাবাসীকে। এ কারণে শিশু-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া কমে গেছে, পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। স্থানীয়রা জানান, দুর্ভোগ লাঘবে ২০২১ সালে চাঁদা তুলে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অস্থায়ী পাটাতন নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে গত এপ্রিলে অস্বাভাবিক জোয়ারে পশ্চিমপাড়ের অংশ ভেঙে পড়ে। এরপর চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে ভাঙা অংশে গাছ বিছিয়ে কোনোভাবে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, চান্দার খালের দুই পাড়ে চর ঘাসিয়া, চর ইন্দুরিয়া, চর জালিয়া, নতুন কানিবগার চরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বসবাস করছে। এসব এলাকার মানুষ মেঠোপথ ধরে খাল পাড়ি দিয়ে চরবংশীর খাসেরহাট ও রায়পুরে আসা-যাওয়া করেন। তবে সড়ক যোগাযোগও নাজুক; মাইলের পর মাইল কাঁচা রাস্তা হেঁটে চলতে হয়।
চরের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন খান বলেন, আগে এখানে সাঁকো ছিল। কিছু দিন পর পর সেটি জরাজীর্ণ হয়ে গেলে লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো। অনেক নারী সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে। এরপর এলাকার লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে খালের ওপর পাটাতন তৈরি করা হয়। কিন্তু নদীর জোয়ারের পানি এ খাল দিয়ে ঢোকার সময় পাটাতনের একাংশ ধসে পড়ে। এরপর পুরোপুরি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়লে ভাঙা অংশে গাছ বিছিয়ে দেওয়া হয়।
চর জালিয়া গ্রামের কৃষক মহিদ আলী বলেন, সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় চরের লোকজনকে কোনো পণ্য নিয়ে মাইলের পর মাইল কাদাযুক্ত কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। চরের জমিতে ব্যাপক হারে সয়াবিন, ধান ও সবজি আবাদ হয়। কৃষিপণ্যগুলো ঘরে তুলছে বা বাজারে নিতে কোনো পরিবহন পাওয়া যায় না। কাঁচা রাস্তা সলিং এবং খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করলে এ অঞ্চলের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। আরেক বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, চরের কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে সহজে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের কাছে নেওয়া যায় না। রোগীদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা ঘাটে অসুস্থের পারাপার করতে হয়।
পশ্চিম চর ঘাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহির আলম বলেন, ‘ভেলা দিয়ে খাল পার হওয়ার সময় আমিও পানিতে পড়ে গিয়েছি। ভয়ে বিদ্যালয়ে ছোট ছাত্রছাত্রীরা কম আসছে। অনেকে সাঁতরে এসে পাড়ে জামাকাপড় বদল করে। সবার দাবি খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ। সরকার নজর দিলেই আমরা মুক্তি পাব।’
এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মুন্সি বলেন, বিষয়টি সরেজমিন গিয়ে দেখা হবে। জনদুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।