ময়মনসিংহের নান্দাইলে ১৩৮ নম্বর মেরাকোনা আছিরুন্নেছা এলাহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর জানা গেল বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো জমি নেই।
এদিকে জমির অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষাব্যবস্থা। দুটি ভবন, একটি ওয়াশ ব্লক এবং খেলার মাঠ থাকলেও বিদ্যালয়ের জমির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এমনকি ভুয়া দলিল দিয়ে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নে মেরাকোনা গ্রামের ইলাহি সরকারের ছেলে আব্দুল মালেক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু নিজের জমিতে বিদ্যালয় না করে প্রতিবেশী নূর হোসেন ব্যাপারীর জায়গায় এটি নির্মাণ করেন। পরে নূর হোসেন ব্যাপারীর দুই ছেলে আশ্রব আলী ও জাফর আলী বিদ্যালয়ের জমি নিজেদের নামে নামজারি করে নেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ (সরকারি) করান এবং সরকারি অনুদানে দুটি ভবনও নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের দখলে থাকা ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এ জমি তার চাচা শ্বশুর জাফর আলীর কাছ থেকে কেনা। অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের বাকি ২৫ শতাংশ জমি ও ভবন তার শ্বশুর আশ্রব আলীর নামে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার এবং সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বাকি জমিটুকুও বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। এতে ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টি শুধু দুটি ভবন নিয়েই টিকে থাকবে।
এ বিষয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘জায়গাটি আমি আশ্রব আলীর কাছ থেকে এওয়াজ বদল দলিল করে নিয়েছিলাম। এখন যদি তারা বলে বিদ্যালয়ের নামে জায়গা নেই, তাহলে নেই। তারা যদি বিক্রি করে দেয়, করে দিক। আমার কিছু করার নেই।’
বর্তমান প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি, কিন্তু আমার কাছে বিদ্যালয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। বিদ্যালয়ের বোর্ডে ৪১ শতাংশ লেখা থাকলেও বাস্তবে ২৫ শতাংশ জায়গা দখলে আছে, যার কোনো কাগজ নেই। যেটুকু আছে, তা আমার শ্বশুরের নামে।’
নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রধান শিক্ষককে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। যদি তিনি কাগজ দেখাতে না পারেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন