ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পেঁপে চাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

ইনসান সাগরেদ, পঞ্চগড়
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:৫০ এএম

বিস্তীর্ণ পেঁপে বাগানে এক একটি গাছে ফলেছে গড়ে ৭০-৮০টি করে পেঁপে, যার কোনো কোনোটির ওজন হয়েছে দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত। কাঁচা পেঁপে রান্নার সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে বিক্রি করে দুভাবে আয় করছেন চাষিরা।

এ কারণে দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বাড়ছে ফল ও সবজি হিসেবে ব্যবহৃত পেঁপের বাণিজ্যিক চাষ। এ বছর রবি মৌসুমে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে ভালো দাম না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে। রোগবালাই কম, ফলন ভালো ও উৎপাদন খরচের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন প্রান্তিক চাষিরা।

এদিকে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করতে উন্নত বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ সব রকমের সহযোগিতা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

চাষিরা বলছেন, গাছ রোপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল এবং মোটামুটি ৯০ দিনের পর থেকেই ফল আহরণ করা সম্ভব। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৪০০-৫০০ মণ পর্যন্ত পেঁপে, যা কাঁচা অবস্থায় বিক্রি হয় ৬০০-৮০০ টাকা মণ হিসেবে। রোগবালাই কম হওয়ায় খরচও হয় কম। তা ছাড়া বাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব বলে জানান তারা।

এ বছর অন্য সবজি চাষ করে সেভাবে লাভের মুখ দেখতে না পেলেও বাবু, টপলেডি, কিংলেডি, রেডলেডিসহ উন্নত বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষ করে এখন ভাগ্যবদলের স্বপ্ন বুনছেন তারা।

পেঁপেচাষি রহমত আলী বলেন, ‘আমার বাগানে মোট ২ হাজার ৩০০ চারা গাছ লাগিয়েছি। বাবু ও টপলেডি এই দুই জাত পেঁপে চারা লাগিয়েছি। একেকটি পেপের ওজন ১ কেজি থেকে ২ কেজি সাইজের। এখন পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাবু জাতের পেঁপে এরই মধ্যেই বিক্রি শুরু করেছি। টপলেডি জাতের গাছেও পেঁপে এসেছে তবে সেগুলো পাকায় বিক্রি করব। আশা করছি, প্রতি বিঘায় ৫০০ মণ পাব।’

বাগান শ্রমিক আইনুল বলেন, ‘আমরা বাগানে কাজ করে প্রতিদিনি ৬০০ টাকা পাই, এখানে আমরা ৬ জন কাজ করি। আরও ২-৪টা এমন বাগান থাকলে আমাদের কর্মসংস্থান বাড়ত। প্রতিদিন কাজ করতে পারায় বউ-বাচ্চা নিয়ে আমরা ভালো আছি।’

সদর উপজেলার টুনিরহাট, হাড়িভাসা, বোদা উপজেলার ব্যাংহারি, তেপুকুড়িয়াসহ জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এভাবেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় পরিসরে বেশ কিছু পেঁপে বাগান। আর এসব বাগানে বেশ কিছু কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, জেলায় অন্য ফসলের পাশাপাশি এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে একাধারে কাঁচা সবজি ও পরবর্তী সময়ে পাকা ফল হিসেবে বাবু, টপলেডি, রেডলেডিসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের পেঁপে আবাদ করা হচ্ছে। পেঁপেচাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব রমক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের একই সঙ্গে সবজি ও ফলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম পুষ্টিকর ও উন্নত জাতের পেঁপে চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।