ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্কুল মাঠ দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

*** দখলে বিলীন হচ্ছে খেলার মাঠ, প্রশাসন নীরব

নিয়মিত তদারকির অভাবে দখলে দিনে দিনে ছোট হয়ে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ নামে পরিচিত খেলার মাঠ। ইতিমধ্যে মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ দখলে নিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে রেখেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মানুষজন। একসময়ের বিশালাকৃতির এই মাঠকে দখলমুক্ত করতে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন এলাকার সচেতনমহল, ক্রীড়াপ্রেমী ও গ্রামবাসীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, ১১নং শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল সঞ্জরপুর (বেড়ীগাঁও) চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন সড়কের ঘেঁষে এই খেলার মাঠ। সরকারি এই মাঠ তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে পরিচিত থাকলেও বাস্তবে এই মাঠের জায়গা খাস। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে 

মাঠের ওপর ঘর নির্মাণ করেছেন। একই সাথে বেড়া দিয়ে রেখেছেন। দখল করে মাঠ ছোট করায় খেলাধুলা করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মাঠ একটা সময় অনেক বড় ছিল। গত কয়েক বছর ধরে আস্তে আস্তে মাঠের আশপাশের জায়গা দখল করে আসছেন মাঠের পাশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর আগে কেউ কেউ সরকারি মাঠের এই ভূমি দখলে নিয়ে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। নতুন করে অনেকেই ঘর বানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের পাশের ভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সরকারি ভূমি দখলে নিয়েছেন। এভাবে চারপাশের ভূমিই দখল চলছে।

স্থানীয় অনেক অভিভাবক জানান, প্রতিদিন বিকেলে মাঠটিতে খেলাধুলা করে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সি ছেলেরা। কিন্তু দখলদারদের কারণে তাদের খেলাধুলার জায়গা ছোট হয়ে আসছে। খেলার সময় বল গিয়ে পড়লে দখলকারীরা কথাবার্তা বলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মাঠ দখল করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল খালেক, আব্দু মিয়া, জমির আলী, আমির আলী, জুনাব আলী (পাশ্বমনি), মজিদ মিয়া, মাসুদ মিয়াসহ আরও বেশ কয়েকজন। তবে তাঁরা মাঠের বাইরে ঘর বানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

তেলিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আর কোনো মাঠ নেই, একটি মাত্র মাঠ। এই মাঠটি দখল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের খেলার মাঠ বেদখল হওয়ার বিষয়ে এর আগে মৌখিক ভাবে অনেকজনের কাছে বলেছি। কিন্তু কেউ কোন গুরুত্ব দেয়নি। স্থানীয় সচেতন মহলের বিষয়টি জানা আছে। বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি ভূমি উদ্ধার প্রয়োজন বলে জানান তারা।

পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, মাঠ দখল হলে এলাকার বাচ্চারা খেলাধুলার সুযোগ সুবিধা হারাবে। একটা সময় এই মাঠ অনেক বড় ছিল দখলের কারণে ছোট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই ভূমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আসছে কিছু মানুষ। বর্তমানে এখানকার বেশকিছু ভূমি দখল হয়েছে। এগুলো উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, মূলত মাঠের জায়গাটি খাসজমি। তবে স্কুলের মাঠ নামে পরিচিত। মাঠের অনেক জায়গা স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছেন এ বিষয়ে আমরা মৌখিকভাবে ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিপা রানি দাস বলেন, আমি নয় মাস হয়েছে দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি আমাকে কেউ অবগত করেনি। ইউএনওকে অবগত করব।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দেখে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। দখল করা জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এই মাঠ তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ নামে পরিচিত থাকলেও মূলত এটা খাসজমি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখব এবং অভিযান পরিচালনা করব।