জুলাই আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল বৃহস্পতিবার ৩৯ পৃষ্ঠার এই অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রেখেছেন জানিয়ে কৌঁসুলি মিজানুল ইসলাম বলেন, সেদিন ইনুকে হাজির করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কৌঁসুলি মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভাষায় রণক্ষেত্রের সহযোদ্ধা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগে ফরমাল চার্জ আমরা দাখিল করেছি। অনারেবল ট্রাইব্যুনাল-২ আমাদের ফরমাল চার্জ, সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট বিবেচনা করে আসামি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। আগামী ২৯ তারিখ প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট, যেহেতু তিনি আরেকটি মামলায় আটক আছেন, তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, হাসানুল হক ইনু ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এবং জাসদের সুপ্রিম। তিনি নিয়মিত শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন এবং তিনি ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে স্থানীয় এসপি এবং তার দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিতেন। শেখ হাসিনাকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সশস্ত্র ক্যাডারকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনে নির্দেশনা দিতেন।
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ দাখিল করার কথা উল্লেখ করে কৌঁসুলি মিজানুল বলেন, গত বুধবার ওই ফোনালাপ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দাখিল করা হয়েছিল। সেই ফোনালাপ ট্রাইব্যুনাল-২-এ দাখিল করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং ওই ফোনালাপের ট্রান্সক্রিপ্টসহ। মিজানুল বলেন, ইনু ভারতের ‘মিরর নাউ’ নামক একটি অনলাইন পোর্টালে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, নিউজ ২৪ নামের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, আরও একটা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ ছাড়া দেখামাত্র গুলির নির্দেশের যে অর্ডার দিয়েছেন, সেসব আনুষ্ঠানিক অভিযোগে রাখা হয়েছে।
অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছেÑ ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নির্দেশনা; ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র নিরীহ জনতাকে চিহ্নিত করা; ছত্রীসেনা নামিয়ে বম্বিং করা, গুলি করা; এসব নির্দেশনা স্থানীয় কুষ্টিয়ার এসপিকে অবহিত করা।
মিজানুল বলেন, কথোপকথনে আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের ধরা হবে, তারপর স্ক্রলে নিউজে আসবে যে তাদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ছেড়ে দেওয়া হবে আরকিÑ মানে তাদের মেরে ফেলা হবে। এ ছাড়া ফোনালাপ থেকে যেটা উঠে এসেছে, জঙ্গি নাটকের কার্ডটা খেলতে হবে। আন্দোলনকারীদের জঙ্গি বলা হবে, তাদের গুলি করে হত্যা করা হবে। এটা প্রচার করা হবে যে জঙ্গি আক্রমণে তারা নিহত হয়েছেন। ৫ আগস্ট কারফিউ উঠিয়ে দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ২ হাজার লোক ঢাকায় জমায়েত করতে হবে। শিবিরের মেরুদ- ভেঙে দিতে হবে। বিএনপিকে ধ্বংস করে দিতে হবে।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিভিন্ন মামলায় হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।