ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:১৩ এএম

*** ক্ষতির মুখে ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি
*** স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগছে অন্তত ১৬ হাজার মানুষ

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সরকারি খাল ইজারার নামে বাঁধ নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে। খালের প্রাকৃতিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় প্রায় ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি এখন ক্ষতির মুখে। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগছে অন্তত ১৬ হাজার মানুষ। এতে কৃষি উৎপাদন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম ও ৯টি মৌজার বিস্তীর্ণ বিলের মধ্য দিয়ে ৩শ বছরেরও পুরোনো একটি খাল প্রবাহিত ছিল। খালটি এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। এর সঙ্গে সংযুক্ত শাখা খালগুলো বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী ইছামতি ও কালন্দি নদীতে গিয়ে মিশেছে।

কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল গফফার, শেখ রহমত আলী, হাসান আলী, ইউনুছ আলী, রজব আলী, রওশন আলী, মাহামুদ আলী, শান্তি কুমার ঘোষ, আবুল কালাম, আব্দুল ওহাব, আব্দুল গাজীসহ কয়েকজন ব্যক্তি সরকারের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে খাস জমি ইজারা নিয়ে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করেন। শর্ত অনুযায়ী প্রবাহিত খাল ভরাট, বাঁধ নির্মাণ বা পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোনো অনুমতি না থাকলেও তা অমান্য করে তারা খালের প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত করে একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়েছেন। ফলে খালটি আজ প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম ফারুক, হাবিবুল্লাহসহ অনেকে জানান, খালে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষায় শত শত বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ফসলি জমি, বসতভিটা, পুকুর, মৎস্যঘের পানিতে ডুবে কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একইসঙ্গে গবাদিপশু ও মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে।

তাদের দাবি, ২০১০ সালে তৎকালীন ইউএনও খালটিকে খাস খাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এমনকি ২০২১ সালে বিএসডিসির অর্থায়নে খালটি খনন করে উন্মুক্তও করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে প্রভাবশালীরা নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করে নেয়। এর প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছি। এক পক্ষ দাবি করছে খালটি তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। অন্যদিকে স্থানীয়রা খালটি অবমুক্তের আবেদন জানিয়েছেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

অভিযুক্তদের মধ্যে মোস্তাফিদ লিটন জানান, তাদের দাদা ১৯৬৭ সালে সরকারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে জমিটি ক্রয় করেন এবং বর্তমানে খতিয়ানভুক্ত। তাদের দাবি, ওই স্থানে আগে খাল ছিল না।

এদিকে, পরিবেশ আইনবিদ সংগঠন (বেলা)-এর খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করে খালটি অবমুক্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি খালকে দখল করে রাখা হলে কৃষি, পরিবেশ ও পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ চরম হুমকির মুখে পড়বে। তাই দ্রুত বাঁধ উচ্ছেদ করে খালটি উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।