পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৩ জন জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করেন। পরে সে দেশের কোস্ট গার্ডের হাতে তারা আটক হন। বর্তমানে তারা পশ্চিমবঙ্গের কাটদ্বীপ জেলহাজতে বন্দি রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ইন্দুরকানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইন্দুরকানীর পাড়েরহাট এলাকার মালেক বেপারীর মালিকানাধীন একটি ফিশিং ট্রলার ‘এমভি মায়ের দোয়া’ নিয়ে সাগরে রওনা দেন ওই ১৩ জেলে। মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ১ নম্বর চালনার খাঁড়ি বয়ায় জাল ফেলার কিছুক্ষণ পরই ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনটি মেরামতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। একপর্যায়ে স্রোতের টানে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেসে ভারতের জলসীমায় চলে যায়। এর পাঁচ দিন পর, ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ভারতীয় কোস্ট গার্ড ট্রলারটি জব্দ করে এবং এর সঙ্গে থাকা জেলেদের আটক করে স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
গ্রেপ্তার জেলেরা হলেনÑ মোরেলগঞ্জের চ-ীপুর গ্রামের খোকন মাঝি, খায়রুল বাশার, মিরাজ শেখ, তরিকুল ডাকুয়া, শহিদুল ইসলাম, আকরাম খান, ইউসুফ মোল্লা, রাজু শেখ, রাকিব সিকদার ও মারুফ বেপারী। এ ছাড়া পিরোজপুর সদর উপজেলার বাদুরা গ্রামের আল-আমিন, ইন্দুরকানী উপজেলার চাড়াখালী গ্রামের তরিকুল ইসলাম এবং উমেদপুর গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন একই ট্রলারে ছিলেন।
ভুক্তভোগী জেলেদের পরিবার জানায়, হঠাৎ করে ট্রলারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তারা উৎকণ্ঠায় ছিলেন। পরে খবর আসে যে, ট্রলারটি ভারতের জলসীমায় ভেসে গিয়ে জেলেরা আটক হয়েছে।
এদিকে কোরো সন্তান, কারো স্বামী ও ভাইয়ের খবর জানতে না পেরে স্বজনদের আহাজারি যেন থামছেই না। আয়-উপার্জন বন্ধ হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে পরিবারের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। অনেকেই কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমরা শুধু তাদের নিরাপদে ফিরে পাওয়ার আশায় বেঁচে আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৎস্য অফিসের কোনো কর্মকর্তা আমাদের কোনো খোঁজ নিতে আসেনি।
ট্রলারের মালিক মালেক বেপারী জানান, আমার ট্রলারেই তারা সাগরে গিয়েছিল। পরে ভারতীয় একটি সূত্র থেকে জানতে পারি, তারা কাটদ্বীপ জেলখানায় নিরাপদে আছে।
ইন্দুরকানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।