ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

পূজামণ্ডপে চালের বদলে  টাকা, সিন্ডিকেটে বরাদ্দ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম

ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ আর ভক্তির আবহে এবারও সাজসজ্জায় ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পূজাম-পগুলো। তবে আনন্দের এই পরিবেশে ভিন্ন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সরকারি বরাদ্দের চাল নিয়ে অসন্তোষ। পূজা উদ্যোক্তাদের অভিযোগ সরকারি বরাদ্দের ৫০০ কেজি চালের পরিবর্তে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধেক দামের টাকা, বাকি অংশ গায়েব করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি পূজাম-পে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাজারমূল্যে যার দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু উদ্যোক্তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, উপজেলায় থাকা ৪২টি পূজাম-প থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। চালের ডিও হাতে পেলেও উদ্যোক্তাদের চাল বুঝে নিতে বিলম্ব করান সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা। পরে তড়িঘড়ি করে গুদামে ডেকে এনে ফাঁকা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করিয়ে দেওয়া হয় নগদ টাকা। এ কাজে তাদের সহায়তা করেছে পূজা উদযাপন কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য।

বর্মণপাড়া পূজাম-পের সভাপতি শীতল চন্দ্র বর্মণ বলেন, বরাদ্দের ডিও নিয়ে খাদ্যগুদামে যাওয়ার পরে কর্মকর্তা বলেন স্বাক্ষর করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। এ সময় উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিমাই বাবুও তাই বললেন। তখন টাকা নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বরাদ্দের চালগুলো তাকে দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আনন্দময়ী যুব সংঘের সভাপতি উষা রঞ্জন সরকার বলেন, পূজার ব্যস্ততার মাঝেই বরাদ্দ আসে। এমন সময় চাল বুঝে নেওয়া কঠিন, তাই বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দেন বলে জানান তিনি।  

ফুটন্ত কলি যুব সংঘের সভাপতি লিটন রবি দাস বলেন, ইউএনও সাহেব মিটিংয়ে চাল বরাদ্দের কথা জানান। পরে গুদামে গিয়ে দেখি কিছু লোক ১৫ হাজার টাকা ধরে  সবার ডিও কিনে নিচ্ছে। পাশের জেলায় একই চাল ২২-২৫ হাজারে বিক্রি হলেও, আমরা ১৫ হাজারেই দিতে বাধ্য হই।

কটিয়াদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পূজাম-পে আগত ভক্তদের আহার্য (খাবার) বাবদ বিতরণের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পূজাম-পের সভাপতি/সম্পাদক এসে বরাদ্দকৃত চালের ডিও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এরপর বাকি কাজ খাদ্য বিভাগের। 

খাদ্যগুদামের ভেতরে চালের পরিবর্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ। 

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পূজাম-পে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চালের পরিবর্তে টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলার ৩৮৪টি পূজাম-পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯৭ টন চাল। এর মধ্যে কেবল কটিয়াদী উপজেলার ৪২টি পূজাম-পেই বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২১ টন। কিন্তু বরাদ্দের বড় অংশ কালোবাজারে চলে যাওয়ার অভিযোগে উৎসবের পবিত্রতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ধর্মীয় উৎসবের পবিত্রতা রক্ষায় এবং পূজা উদ্যোক্তাদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেট ভেঙে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।