বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী গত রোববার ভারতে ইলিশ রপ্তানির শেষ দিন। এবার অনুমতির ১২০০ টনের মধ্যে মাত্র ১০৭ টন ২২৬ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। দেশের ৩৭ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জন রপ্তানিকারক ভারতে ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ১০৬ টন ৩৪ কেজি এবং আখাউড়া বন্দর দিয়ে ভারতে গেছে ১১৯২ কেজি। ইলিশ উৎপাদন ঘাটতি ও দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ইলিশ আগে সাধারণ মাছের মতো রপ্তানি পণ্যের তালিকায় থাকলেও উৎপাদন ঘাটতি দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে বিগত সরকার। পরে ২০১৯ সালে এসে বিশেষ বিবেচনায় আবারও শুধু দুর্গাপূজার সময় শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। এ বছর অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশের ৩৭ জন রপ্তানিকারককে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ইলিশ রপ্তানি। শর্ত অনুযায়ী ৫ অক্টোবর রপ্তানির শেষ দিন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩৭ জনের মধ্যে ১৬ জন ব্যবসায়ী মাত্র ১০৭ টন ২২৬ কেজি ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছেন। বাকি ২১ জন কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি।
এর আগে, গত বছর ৪৯ জন রপ্তানিকারককে ২৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। সে সময় ও ৪৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৬টি প্রতিষ্ঠান ৫৩২ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল। এদিকে ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে সক্ষমতা যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় রপ্তানিকারক নির্বাচন করায় রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
মৎস্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন। ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ৪ হাজার ৬০০ টন অনুমোদনের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ টন। ২০২০ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন অনুমতি দিলেও ভারতে গিয়েছিল ৫০০ টন। ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার, তবে রপ্তানি হয়েছিল ৪৭৬ টন ইলিশ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মেহেরুল্লাহ জানান, সক্ষমতা যাচাই না করে রপ্তানিকারক নির্বাচন সরকার বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। তারাই আবার পরের বছর রপ্তানির অনুমতি পেয়ে থাকে। অনুমতি নিয়ে যারা কোনো মাছ রপ্তানি করতে পারেনি তাদের পরবর্তীতে আর অনুমতি না দিলে যারা বৈধ মাছ ব্যবসায়ী না রপ্তানিতে তাদের প্রবণতা কমে আসবে বলে তিসি জানান।
বেনাপোলের ইলিশ রপ্তানিকারক বিশ^াস ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বিশ^াস জানান, আমি ৩০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। এ বছর কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের বাজারে নিজস্ব ইলিশ থাকায় সেখানকার বাজারে দাম কম। ভারতের আমদানিকারকরাও ইলিশ নিতে তেমন আগ্রহ দেখাননি। যে কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়াও কম সময় বেঁধে দেওয়ার কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি।
বেনাপোল বন্দরের মৎস্য নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ণয় কেন্দ্রের পরিদর্শক আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, শর্ত অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ইলিশ রপ্তানির শেষ দিন। এবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০৬ টন ৩৪ কেজি ইলিশ গেছে ভারতে। রপ্তানি ইলিশের ওজন প্রতিটা এক কেজি বা তার বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজির রপ্তানি মূল্য সর্বনিম্ন নির্ধারণ করে দেয় ১২ ডলার ৫০ সেন্ট। যা বাংলাদেশি অর্থে ১৫৩৫ টাকা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন