- ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামে উপজেলা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদন
- চলতি মাসেই নিকার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে
- অনুমোদনের খবরে এলাকায় বইছে উচ্ছ্বাসের ঢেউ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভেঙে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামে নতুন আরেকটি উপজেলা গঠনের দাবি ২০০০ সালের পর থেকে জোরালো হতে থাকে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা বাস্তবায়ন কচ্ছপগতিতে এগোতে থাকে। সে সময় নানা বাধা-বিপত্তিতে থমকে যায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা বাস্তবায়নের বিষয়টি আবারও জোরালো হয়। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এবার সেই দাবির পালে লেগেছে হাওয়া। ফটিকছড়ির ভূজপুর থানা এলাকা নিয়ে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামে নতুন একটি উপজেলা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বহুদিনের দাবি পূরণের খবরে উত্তর ফটিকছড়ি এখন উৎসবে মুখর। চলছে মিষ্টি বিতরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধুম। স্থানীয়দের আশাÍ নতুন উপজেলা গঠনের মধ্য দিয়ে সীমান্তঘেঁষা উত্তর ফটিকছড়ি অবশেষে প্রশাসনিক ও উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, ভূজপুর থানা এলাকা নিয়ে নতুন উপজেলা গঠনের প্রস্তাবটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রি-নিকারের বৈঠকে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।
নিকার সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ দেশের নতুন উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে নিকার বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর ফটিকছড়ি দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক অবহেলার শিকার। আগে থেকেই উপজেলার দাঁতমারায় একটি শক্তিশালী পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও ২০০৭ সালে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নতুন খরচে ভুজপুরে থানা স্থাপন করা হয়, যা ছিল উত্তরাঞ্চলের জনগণের প্রতি একধরনের প্রশাসনিক বৈষম্য।
ফটিকছড়ি উপজেলার আয়তন প্রায় ৭৭৩.৫৪ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়নের আয়তন প্রায় ৪৭০ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এত বিশাল এলাকায় নেই কোনো উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান এমনকি একটি ফায়ার স্টেশনও নেই, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি।
প্রায় আড়াই লাখ জনসংখ্যার এই এলাকায় রয়েছে ১৮টি চা-বাগান, দুটি রাবার বাগান, শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩০টির বেশি বাণিজ্যকেন্দ্র। সীমান্তঘেঁষা এ জনপদের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড়, পশ্চিমে সীতাকু- এবং দক্ষিণে হাটহাজারী উপজেলা অবস্থিত। আয়তনে বৃহৎ এ উত্তরাঞ্চল নিয়ে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামে নতুন উপজেলা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের খবরে এলাকায় বইছে উচ্ছ্বাসের ঢেউ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামের নতুন উপজেলা গঠনের প্রস্তাব প্রি-নিকারে অনুমোদন পেয়েছে। এটি জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের অংশ। নতুন উপজেলা গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিক সেবা আরও সহজলভ্য হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন