রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল মেমিন, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

অর্থের অভাবে ভেঙে যাচ্ছে প্রতিমা মুন্ডার স্বপ্ন

আব্দুল মেমিন, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

অর্থের অভাবে ভেঙে যাচ্ছে প্রতিমা মুন্ডার স্বপ্ন

*** বিকেএসপির প্রশিক্ষণ ফি বাকি ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা

প্রতিমা মু-ার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ফুটবল। মাঠে বল পায়ে ছুটে চলা, দেশের হয়ে গোল করা-এটাই তার জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ঝুঁকির মুখে। অর্থাভাবে হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে তার খেলা, থেমে যাবে প্রতিভার উজ্জ্বল যাত্রা।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মু-া এখন দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি। মাঠে দেশের গৌরব বয়ে আনা এ কিশোরীর ঘর নেই, নিরাপত্তা নেই আছে কেবল অনিশ্চয়তা। প্রশ্ন এখন একটাইÑঅর্থের অভাবে কি প্রতিমার প্রতিভা থেমে যাবে?

প্রতিমার জন্ম খুলনার কয়রায় ২০০৯ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ তাদের বসতভিটা কেড়ে নেয়। জীবনের নিরাপত্তার খোঁজে পরিবারটি চলে আসে সাতক্ষীরায়। বাবা শ্রীকান্ত মু-া ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে বছরজুড়ে কাজ করেন, আর মা সুনিতা মু-া অন্যের মৎস্য ঘেরে শ্রম দিয়ে সংসার চালান। তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই; তবু মেয়ের পড়াশোনা ও খেলাধুলা বন্ধ হতে দেননি। গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই প্রতিমা ফুটবলে অনন্য ছিল। স্কুল, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে একের পর এক জয় এনে দেয় সে। তখনই তার প্রতিভা চোখে পড়ে স্থানীয় প্রশিক্ষক আরিফুল হাসান প্রিন্সের। প্রিন্স তাকে নিজের সন্তানের মতো করে গড়ে তোলেনÑখেলাধুলা ও শৃঙ্খলার পাঠ দেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জেলা পর্যায়ে সুনাম অর্জনের পর প্রতিমা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন, প্রভাতে মাঠে দৌড়Ñআর রাতে আলো-নেভা বাতির পাশে পড়াশোনা। ২০২১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়। তারপর ভালো খেলে বয়সভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, ২০১২ সালে এবং এফসি অনূর্ধ্ব-১৭, ২০২৩ সালে খেলায় অংশগ্রহণ করে। সুন্নত কাপ অনূর্ধ্ব ২০১৭-২০২৩ সালের খেলায়ও অংশগ্রহণ করেছিল। প্রতিমা জাতীয় দলের হয়ে ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশের জন্য গৌরব অর্জন করেছেন। জাতীয় দলে তিনি খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে।

তার সতীর্থরা বলেন, প্রতিমা মাঠে যেমন দৃঢ়, তেমনি বাইরে বিনয়ী ও পরিশ্রমী। বর্তমানে প্রতিমা ঢাকায় একটি কলেজে এইচএসসি পড়ছেন এবং বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বেতন প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও অভাবের তাড়নায় প্রতিমা পাঁচ বছরের মাসিক ফি দিতে পারে নাই। এর ভেতরে ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে খেলার কারণে এক বছরের খরচ মাফ করে দেয়। তারপরও বিকেএসপি এখনো তার কাছে পাবে ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা।

বিকেএসপির অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বকেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে প্রতিমাকে প্রশিক্ষণার্থী বহিষ্কারের বিধান অনুযায়ী বাদ দেওয়া হবে। এই চিঠি হাতে পেয়ে প্রতিমা ও তার পরিবার হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। তাদের মতে, এ টাকা জোগাড় করা তাদের মতো শ্রমজীবী পরিবারের পক্ষে ‘প্রায় অসম্ভব’।

মা সুনিতা মু-া বলেন, ‘মেয়ের খরচ জোগাতে অন্যের ঘেরে কাজ করি। ভগবান যেন মেয়েকে আশীর্বাদ দেন, দেশ যেন তার গর্ব হয়Ñএই প্রার্থনাই করি।’ তিনি আরও জানান, একটি স্থানীয় সংস্থা সহানুভূতির বশে তাদের জন্য একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করে দিয়েছে, কিন্তু ঘরে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত ঠিকমতো নেই। সরকারি সাহায্য মেলেনি বহুদিন।

প্রতিবেশী বিবেকানন্দ, সুনীল রায়, শেফালী মু-া, তুলসী মু-ারা বলেন, ‘প্রতিমা আমাদের গ্রামের গর্ব। যদি সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা একটু সহায়তা করেন, মেয়েটি এক দিন দেশকে বড় কিছু উপহার দিতে পারবে।’

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপা রানী সরকার বলেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকলেও, সুযোগ এলে প্রতিমার জন্য বসতঘর ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।’

দারিদ্র্য যেন প্রতিমা মু-ার প্রতিভার শত্রু না হয়Ñ এই প্রত্যাশা সবার। মাঠে দেশের পতাকা উড়ানো এক কিশোরীর স্বপ্ন যদি কেবল টাকার অভাবে নিভে যায়, তবে সেটি শুধু প্রতিমার ক্ষতি নয়Ñ এটা পুরো জাতিরই ক্ষতি। প্রতিমার পাশে দাঁড়ানো মানে দেশের ভবিষ্যৎ নারী ক্রীড়াশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা।


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!