- বিয়ানীবাজারে হাজারো ফার্মেসির বেশির ভাগই অনিবন্ধিত ও ফার্মাসিস্টবিহীন
- তদারকির অভাবে মানহীন ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি হচ্ছে খোলামেলাভাবে
- রেফ্রিজারেশন না থাকায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মান নষ্ট হচ্ছে।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে অসংখ্য অনিবন্ধিত ফার্মেসি। নিয়ম অনুযায়ী, রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসির লাইসেন্স দেওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবে উপজেলার অধিকাংশ ওষুধের দোকানে ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি দূরের কথা, অনেক দোকানই লাইসেন্সবিহীনভাবে বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এলাকার মানুষ পড়েছে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
উপজেলায় নিবন্ধিত ফার্মেসির সংখ্যা শতাধিক হলেও অনিবন্ধিত ফার্মেসির সংখ্যা কারো জানা নেই। বেসরকারি হিসাবমতে, বিয়ানীবাজারে এখন হাজারের কাছাকাছি ফার্মেসি সক্রিয়ভাবে ব্যবসা করছে, এর অধিকাংশই প্রশাসনের নজরদারির বাইরে। এসব দোকানে অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তা ছাড়া বেশির ভাগ ফার্মেসিতে নেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাধ্যতামূলক রেফ্রিজারেটর। ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ওষুধ বিক্রির জন্য ১১টি শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক, যার মধ্যে রয়েছে: ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ লাইসেন্স, রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ না রাখা, নকল বা মিসব্র্যান্ড ওষুধ বিক্রি না করা এবং প্রেসক্রিপশনবিহীন অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ রাখা। কিন্তু এসব শর্তের অনেকগুলোই ফার্মেসিগুলো উপেক্ষা করছে নির্লজ্জভাবে।
বিয়ানীবাজার পৌর শহরে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না অভিযানে নামেন। তার পরিদর্শনে কয়েকটি ফার্মেসিতে পাওয়া যায় নানা অনিয়ম ও লাইসেন্স জটিলতা। তবে গ্রামীণ এলাকার ফার্মেসিগুলো সম্পূর্ণ তদারকির বাইরে।
জানা গেছে, সিলেট জেলায় ফার্মেসি পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন কর্মকর্তা। ফলে এত বিশাল এলাকার সব ফার্মেসি পর্যবেক্ষণ করা কার্যত অসম্ভব। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানহীন ওষুধ বিক্রি করে মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বিয়ানীবাজার ফার্মেসি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন ওষুধ বিক্রি করা যেতে পারে, কিন্তু গ্রামের বাজারগুলোতে এ নিয়ম মানা হয় না। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক, ইনজেকশনসহ নানা ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।’
ফার্মাসিস্ট মো. আবুল হাসান বলেন, ‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ও কোর্স অসম্পূর্ণ রাখায় ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে জটিল সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, যা মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান বলেন, ‘জনবলের ঘাটতির কারণে সব ফার্মেসি পরিদর্শন সম্ভব হয় না। লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি রয়েছে, তবে সঠিক সংখ্যা জানা নেই। আমরা সব ফার্মেসিকে নজরদারিতে আনতে কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নি¤œমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। অনেক সময় দেখা যায়, যে রোগের জন্য ওষুধ নেওয়া হয়, তা কাজ করে না, বরং উল্টো ক্ষতি করে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিয়ানীবাজারসহ সারা দেশে ফার্মেসি খাতে নীতিমালা বাস্তবায়ন, নিয়মিত তদারকি ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন