*** চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা
কোনোভাবেই কমছে না সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মামলার জট। এতে চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সরকারি প্রকৌশলী, আইনজীবী ও বারের নেতারা।
সরকার মামলার জট কমাতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও সাতক্ষীরায় জনবল ও অবকাঠামো সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালত ভবনটি পরবর্তীতে তিনতলা করা হলেও বর্তমানে বিচারিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৩২টি সহায়ক কর্মচারীর শূন্যপদ রেখে। এ ছাড়া আদালতের সেরেস্তা ও দপ্তরগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট কক্ষে পরিচালিত হওয়ায় নথি সংরক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সম্প্রতি জেলায় আরও ১৬টি নতুন আদালত সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের সুযোগ না থাকায় এসব আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় এজলাস ও দপ্তর কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সহায়ক কর্মচারীদের জন্য ১২৯টি পদের মধ্যে ৩২টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
বিচারপ্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ধার্য তারিখ আসে আর যায়, কিন্তু বিচার মেলে না। অনেকেই ২৫-৩০ বছর ধরে মামলার পেছনে ঘুরছেন।’ দীর্ঘদিনের এই হয়রানি থেকে রেহাই পেতে তারা দ্রুত বিচার কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য আদালতের সংখ্যা ও বিচারক বাড়ানোর দাবি জানান।
আইনজীবী বদিউজ্জামান ও আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘জনবল সংকট নিরসনের পাশাপাশি নতুন ১৬টি আদালতের বিচারক ও কর্মচারী নিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়ন হলে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবে।’
সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাতক্ষীরায় নতুন করে ১৬টি আদালত সৃষ্টি করেছে, যা জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামো নিশ্চিত করা।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী আলম বলেন, ‘দ্বিতল ভবন ত্রিতল করা হলেও সব বিচারকের বসার জায়গা নেই। অবকাঠামো উন্নয়ন না করলে বিচারক নিয়োগ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে হলে এজলাসের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বসার ও চলাচলের ব্যবস্থাও বাড়াতে হবে।’
জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বর্তমানে তিনতলা ভবনের সব কক্ষেই বিচারকাজ চলছে। নতুন ১৬টি আদালতের জন্য জায়গা বরাদ্দের সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সংকট অনেকাংশে লাঘব হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের অধীন বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৭ হাজার ১০৬টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ৪৩ হাজার ৮০৯টি এবং ফৌজদারি মামলা ১৩ হাজার ২৯৭টি। এসব মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭টি আদালত কাজ করছে।

