ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

নিয়োগ বাণিজ্য-দুর্নীতির অভিযোগ

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পরীক্ষার্থী-জনতার তালা 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০২:২৬ এএম

পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস, নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার্থী ও ছাত্র-জনতা। গতকাল শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের সামনে প্রথমে বিক্ষোভ করে তারা। পরে বিক্ষোভ শেষে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে গত শুক্রবার সিভিল সার্জন অফিসে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে (বৃহস্পতিবার) এবং পরীক্ষার দিন সকালে (শুক্রবার) ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের নিজ বাসা থেকে বের হতে দেখা যায় বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থীদের। ইতিমধ্যে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মো. আরিফিন।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে ৯৭ জন স্বাস্থ্যসহকারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত শুক্রবার সেই প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে পরীক্ষার আগের দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এবং শুক্রবার সকালে বেশকিছু চাকরিপ্রার্থীকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যান।

অভিযোগ উঠেছে, রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে এসব পরীক্ষার্থীকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরএমওর ক্লিনিক ‘নিউ সানে’ নিয়ে আসা হয়। ভোররাতে সেখানে সাংবাদিকরা গেলে কৌশলে পালিয়ে আবার একই এলাকায় আরএমওর বাসায় যায় পরীক্ষার্থীরা। সেখানে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয় এবং তারা সেগুলো মুখস্ত করে। স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ডা. হোসেন ইমাম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

এদিকে পরীক্ষার আগের রাতে আরএমও ডা. হোসেন ইমামের বাড়িতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার্থীদের ‘প্রশিক্ষণমূলক পরীক্ষা’ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমামের বাসায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন পরীক্ষার্থীকে এনে পরীক্ষার প্রশ্ন দেখানো হয়। সারারাত চলে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা। পরদিন সকালেই সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় তারা অংশ নেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিকরা সত্যতা পান এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ফুটেজে দেখা যায়, বেশকিছু পরীক্ষার্থী গভীর রাতে ডাক্তারের বাসাতে প্রবেশ করে এবং সকালে পরীক্ষার ঠিক কিছু সময় আগে বাসা থেকে বেরিয়ে আসছে। তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে দ্রুত হেঁটে এবং দৌড়ে সেখান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে চলে যায়।

এ সময় এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম পরীক্ষা সঠিকভাবে হবে, কিন্তু রাতে অনেককে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন দেখানো হয়েছে। যারা টাকা দিয়েছে, তারা আগেই প্রশ্ন পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমাদের সন্তানরা পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিয়েছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যোগ্যতা নয়, টাকা-পয়সাই সবকিছু। এটা ভীষণ হতাশাজনক।

এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরীক্ষা স্থগিত ও নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. হোসেন ইমাম বলেন, তার বাসায় বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকেন। সেখান থেকে এসব শিক্ষার্থীকে বেরোতে দেখে অনেকে বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তিনি নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে কিছু জানেন না।

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মো. আরিফিন বলেন, বিষয়টি কি ঘটেছে তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।