ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

শ্রমিক বিক্ষোভে অচল রাসিক

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০১:১৭ এএম

দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকার বুধবার সকালে সিটি ভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেন বিক্ষোভকারীরা। এতে প্রতিটি বিভাগে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল সকাল থেকেই করপোরেশনের প্রবেশদ্বার অবরুদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা। বিভিন্ন দাবিতে সমবেত হয়ে তারা স্লোগান দেন। এ কারণে সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সিটি ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীরাও সম্পৃক্ত থাকায় ইতিমধ্যে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহী শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্নতায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের সূত্রে জানা গেছে, রাসিকের বিভিন্ন বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় আড়াই হাজার দৈনিক শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন। বর্তমানে এই শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিদিনের নির্ধারিত মজুরি ৬০০ টাকা। তবে তাদের ৪৮৪ টাকা করে প্রদান করা হয়। কাজে অনুপস্থিত থাকলে তারা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হন।

এদিকে গতকাল রাসিকের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের মজুরি বাড়িয়ে গত জানুয়ারিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের দৈনিক ৭৫০ টাকা এবং অদক্ষদের ৭০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু রাসিক এটি বাস্তবায়ন করছে না।

বক্তারা কয়েকটি দাবি উল্লেখ করে বলেন, সব শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক বেতন অন্তত ২২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। বেতন মাসের ৩ তারিখের মধ্যে প্রদান করতে হবে। শ্রমিকদের উৎসবভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এটি চালু করতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া যাবে না। যদি কেউ কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম করেন, তাহলে তার ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে। চাকরি শেষ হওয়ার পর ৫ লাখ টাকা দিতে হবে।

আন্দোলনকারীদের একজন পরিবহন শাখার গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পরই রাসিকের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আজিম আহমেদ এ বিষয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। রাসিকের সচিবকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কথা। গত তিন মাসেও কমিটি কোনো বৈঠক করেনি, বেতনও বাড়েনি।

পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চার মাস আগে ভ্যানে আবর্জনা ওঠানোর সময় আমার পায়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ঢুকে যায়। এরপর আমাকে তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন আমাকে চিকিৎসা ব্যয় দেয়নি। পাশাপাশি কাজ করতে না পারার কারণে বেতন দেওয়া হয়নি। এখন আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছি।’

অন্যদিকে করপোরেশনের প্রবেশদ্বারে শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করার কারণে গতকাল সিটি ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর ঈ সাঈদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগমসহ কয়েকটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়েন সেবাগ্রহীতারা।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। তবে তারা বেশ কিছু ইললিগ্যাল দাবি করছেন। সবকিছু আইনের মধ্যেই করা হবে। তাদের আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেটি বুঝতে পারছি না। তাদের নেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর পেছনে কারো ইন্ধন রয়েছে কি না, সেটিও দেখা প্রয়োজন।’