শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নাঈম আলমগীর, জামালপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

ব্যাটারি পুড়িয়ে পরিবেশের বারোটা

নাঈম আলমগীর, জামালপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

ব্যাটারি পুড়িয়ে পরিবেশের বারোটা

জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীরচর ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা। একদল অসাধু ব্যবসায়ী পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে চলছে। কারখানার ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও অ্যাসিডের উৎকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। কারখানাটি থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

ইতিমধ্যে বিষাক্ত অ্যাসিড ও রাসায়নিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় অ্যাসিড মিশ্রিত ঘাস ও পানি খেয়ে এক কৃষকের ৬টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে ওই এলাকার কয়েকশ গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গত বুধবার সকালে উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কারখানার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮ জনকে হেফাজতে নিয়েছে নরুন্দি তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ। গরুগুলোর মালিক স্থানীয় কৃষক হেকমত আলী। তার দাবি, গরুগুলোর মৃত্যুর ঘটনায় তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর এলাকায় অবৈধভাবে পুরোনো ব্যাটারি পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার কারখানা পরিচালনা করছিলেন শেরপুর জেলার বালুখোড়া এলাকার মো. আপেল ও লিখন। প্রতিদিন সেখানে আগুনের কু-ুলিতে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা ও অ্যাসিডসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেলে আসছিলেন। এ ছাড়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সঙ্গে সঙ্গে এলাকার গবাদি পশু ও পাখি ঝুঁকিতে পড়েছে। আবার কৃষিজমি ও নদীর পানিতে এসব বিষাক্ত সিসা মিশে যাওয়ায় ওই এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য আজ হুমকির মুখে।

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার সকালে ব্যাটারি পোড়ানো কারখানার পাশে কৃষিজমিতে ঘাস ও নদীর পানি খেয়ে মির্জাপুর গ্রামের কয়েকশ গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ওই এলাকার দরিদ্র কৃষক হেকমত আলীর ৬টি গরু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ছটফট করতে করতে মারা গেছে। তার পালিত বাকি ৭টি গরু এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক হেকমত আলী বলেন, ‘আমার সব গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ, আমি এখন কী করব! গরুই ছিল আমার জীবিকার একমাত্র ভরসা।’

তার দুই মেয়ে ভাবনা ও লিমা বলেন, ‘আমাদের কোনো জমিজমা নেই। বাবার গরুর দুধ বিক্রি করেই সংসার চলত, পড়াশোনার খরচ উঠত। এখন সব শেষ, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যাটারি কারখানায় বর্জ্য পোড়ানোর সময় ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া ও তরল পদার্থের কারণে শুধু গবাদি পশুই নয়, আশপাশের হাঁস-মুরগি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাটারি পোড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের এলাকার পরিবেশেরও বারোটা বেজে যাচ্ছে।

এদিকে গরু মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও কারখানাটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়াসহ পরিবেশদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সজিব বলেন, ‘ব্যাটারি কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে নিরাপত্তার কারণে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে কারখানার মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, ‘এই ঘটনার পর পুলিশ ব্যাটারি কারখানার সব তথ্য সংগ্রহ করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের চার সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। মৃত গরুগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এখন নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া মেডিকেল টিম অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার বর্জ্য নদীতে এবং আশপাশের জমিতে মিশে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু গবাদি পশু নয়, এ বিষাক্ত সিসা মানব শরীরের জন্যও ক্ষতিকর বলেও জানান তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!