ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

দৌলতদিয়া ঘাটে টোল বাণিজ্য

ফয়সাল আহমেদ, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৩:৫৭ এএম
  • নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতি গাড়ি থেকে ৫-৪০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায়
  • বছরে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ৭২ লাখ টাকার বেশি
  • ইউএনও বলেছেন, প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টোল আদায়কে কেন্দ্র করে চলছে নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়, টিকিটবিহীন টাকা গ্রহণ ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ ছোট-বড় যানবাহন পারাপার হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব যানবাহনের কাছ থেকে সরকার-নির্ধারিত টোলের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ঘাটে কর্মরত কিছু কর্মচারী গ্রুপ লিডার আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এই বাড়তি অর্থ আদায় করেন। দিন শেষে এই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন তারা। হিসাব অনুযায়ী, যদি প্রতিটি গাড়ি থেকে ন্যূনতম ৫ টাকা করে বাড়তি নেওয়া হয়, তাহলে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাসে ৭৫ হাজার এবং বছরে প্রায় ৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় হয়। আর সর্বোচ্চ ৪০ টাকা করে নিলে এই পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৭২ লাখ টাকায়!

চালকেরা অভিযোগ করেন, ‘ভাংতি নাই’ বা ‘চা খাওয়ার টাকা’ এমন অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গালাগাল, অপমান বা নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অনেকে জানান, কিছু ক্ষেত্রে গাড়িও আটকে রাখা হয়।

নিজেকে গ্রুপ লিডার পরিচয় দেওয়া আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন যে তারা ভাংতি না থাকার কারণে ৫ টাকা করে বেশি নেন। তবে বাড়তি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা শাখার পোর্ট অফিসার সুব্রত রায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাথী দাস বলেন, ‘সরকার-নির্ধারিত টোলের বাইরে বাড়তি টাকা আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বছরের পর বছর দৌলতদিয়া ঘাটে এই প্রকাশ্য অনিয়ম চললেও প্রশাসনের নীরবতা স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে কি এই দুর্নীতিরও আছে অদৃশ্য ছায়া?