ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

পায়রার ঢেউয়ে নিঃস্ব মানুষ

তাপস মাহমুদ, বরগুনা
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:০৫ এএম
  • এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন
  • সিডরের পর অস্থায়ীভাবে সংস্কার হওয়া বেড়িবাঁধ আজও টেকসই হয়নি
  • পানিসম্পদ উন্নয়ন বোর্ড টেকসই বাঁধ নির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার ঘোষণা

উপর্যুপরি ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। ইউনিয়নের পালের বালিয়াতলী, ছোট বালিয়াতলী, লতাকাটা, শশাতলী, চালিতাতলী, ফালিসাতলী, উরবুনিয়া, চারাভাঙ্গা, ঝিনইবাড়িয়া ও জেলখানাÑ এই গ্রামগুলো পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সাগর মোহনার কাছাকাছি এই ইউনিয়নের পাশে মিলিত হয়েছে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী। এর মধ্যে খরস্রোতা পায়রা নদী মোহনার দুপাড়জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি করেছে। ইউনিয়নের ফালিসাতলী থেকে জেলখানা পর্যন্ত পুরো এলাকায় ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গ্রামবাসী।

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তা-বে ও জলোচ্ছ্বাসে এই অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বহু গ্রাম। সে সময় ভেসে যায় মানুষ ও গবাদি পশু, হারিয়ে যায় হাজারো জীবনের হাসি। সিডরের পর কিছু জায়গায় জরুরি সংস্কার হলেও তা টেকেনি জলোচ্ছ্বাস আর অতিরিক্ত জোয়ারে।

উরবুনিয়া গ্রামের আব্দুস ছালাম বলেন, ‘যখন ঝড়ের সিগন্যাল পড়ে, তখন মনে ভয় কাজ করে। ভাবি, এবারও বুঝি বেড়িবাঁধ ভেঙে সব ভেসে যাবে। আমাদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বলেন, উঁচু বাঁধ হবে, কিন্তু ঝড় শেষ হলে সব আলোচনাও শেষ।’

চারাভাঙ্গা গ্রামের রাশেদা বেগম জানান, ‘সিডরের পর থেকে আজ পর্যন্ত এক চাকা মাটিও ফেলা হয়নি বেড়িবাঁধে। রাস্তাঘাটে গাড়িও চলে না।’

সম্প্রতি জেলখানা গ্রামে স্থানীয় সংগঠন ‘সোনালী যুব সংসদ’-এর উদ্যোগে নদীভাঙন ও মানবিক সংকটের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৩ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল পায়রা নদীর ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও গ্রামে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি।

গত মঙ্গলবার বিকেলে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এসডিই শওকত ইকবাল মেহরাজ, এসও মো. স্বপন হোসেন এবং ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ সংগঠনের বরগুনা শাখার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ প্রমুখ।

পরিদর্শন শেষে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এখানকার বেড়িবাঁধ ও স্লুইস ষাটের দশকে নির্মিত, যা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। স্বল্প মেয়াদে মেরামতের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেট ও সিসি ব্লক নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে।’