*** ছয় বছর আগে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা ভবনে চলছে দাপ্তরিক ও বিচারিক কার্যক্রম
*** ভবনের ছাদে ফাটল, কলাম ও বীম ক্ষতিগ্রস্ত, রড বের হয়ে ধরছে মরিচা
*** বাড়ি ভাড়া করে কার্যক্রম পরিচালনা জন্য বলা হলেও পাওয়া যায়নি উপযুক্ত ভাড়াবাসা
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মারাত্মক ঝুঁকিতে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে আদালতের দাপ্তরিক ও বিচারিক কার্যক্রম। ভবনের ছাদে ফাটল, কলাম ও বীম ক্ষতিগ্রস্ত, রড বের হয়ে মরিচা ধরে গেছে। পুলিশ ব্যারাক, হাজতখানা, মালখানা, এজলাস ও খাস কামরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ জুলাই পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অমলেন্দু মিস্ত্রী পরিদর্শন করে ভবনটি বুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে নিশ্চিত করেন। একই বছরের ৪ আগস্ট আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও উন্নয়ন অনুবিভাগ থেকে জানানো হয় ‘গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী পরিদর্শকপূর্বক ওই ভবনটি বুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী নিশ্চিত করায় বাড়ি ভাড়া করে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
তবে কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরও উপযুক্ত ভাড়াবাসা পাওয়া যায়নি। যে কারণে এখন পর্যন্ত জরাজীর্ণ ভবনেই দাপ্তরিক ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদালত ভবনের ছাদে ফাটল সৃষ্টি, অধিকাংশ কলাম, বীম ও ছাদের আস্তর খসে পড়ে রড বের হয়ে মরিচা ধরেছে, কিছু কিছু স্থানে ছাদ থেকে পানি ছুইয়ে পড়ে মেঝেতে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, আমরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাপ্তরিক কাজ করছি। ভবনের অধিকাংশ জানমালের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। আদালতের গোপন নথিপত্রের নিরাপত্তার হমকির মুখে। এ অবস্থায় আদালত ভবনের চারপাশে কোনা প্রাচীর বা নিরাপত্তা ফটক না থাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বেদখলের আশঙ্কা রয়েছে।
বিচারপ্রার্থীরা জানান, আদালত ভবনের অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তা ছাড়া এখানে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। মাতৃদুগ্ধ কর্ণার, নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা টয়লেট ও নিরাপদ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।
কর্মরত প্রবীণ আইনজীবীরা জানান, ১৯৮৩ সালে এই আদালত ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ৪২ বছরের পুরোনো ভবনটি গণপূর্ত বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করে। তারপরও বিচারপ্রার্থী জনগণ, আইনজীবী ও এই আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট সহিদুজ্জামান সাহিন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড় বা ভূমিকম্প সংগঠিত হলে ভবনটি ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ছাদে পানির চাপ ও ওজন বৃদ্ধি পেয়ে ভবনটি ব্যবহারের ঝুঁকি আরও বহগুণে বাড়িয়ে তুলবে। তিনি আরও বলেন, এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচার প্রার্থী, আইনজীবী সবার দাবি নতুন আদালত ভবন নির্মাণ অথবা ভবনটি মেরামত ও ব্যবহারের উপযোগী করে তােলা।
পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পিন্টু তালুকদার দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একটা প্রকল্পের মাধ্যমে সবগুলো থানায় নতুন আদালত ভবন তৈরি হবে। ওটা প্রক্রিয়াধীন। আমরা ডিজিটাল সার্ভে রিপোর্ট জমা দিয়ে দিয়েছি। আর্কিটেক্ট এসে দেখে গেছে। এখন শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বর্তমানে ওখানকার পরিস্থিতি খারাপ। তাই আপাতত ব্যবহার করার জন্য রিপেয়ার এস্টিমেট আমরা মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে দিয়েছি। সরকার যদি ফান্ড দেয় আমরা অন্তত জাস্ট কিছুদিন ব্যবহার করার জন্য বছরখানেক ব্যবহার করার জন্য ব্যবস্থা করে দিব।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন