নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে পার্বতীপুর বৈদ্যুতিক লাইনের বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের তার গায়েব হয়ে গেছে। যার সংস্থাপন মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ যেমন অবাক হয়েছে, তেমনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর পাওয়ার গ্রিড থেকে ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ে (নেসকো) সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়। পরে বড়পুকুড়িয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দূরত্ব কমের কারণে ২০২০ সালে ওই গ্রিডের লাইন সংযোগ নেয় পার্বতীপুর নেসকো অফিস। বন্ধ করে দেওয়া হয় সৈয়দপুর পাওয়ার গ্রিডের লাইন। এতে সৈয়দপুর থেকে পার্বতীপুর নেসকো কার্যালয় পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার বন্ধ সঞ্চালন লাইন অকার্যকর ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। নজর পড়ে চোর চক্রের। তারা পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত রাতে তার কেটে নিয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলে তার চুরি। অবশেষে সৈয়দপুরের শেষ সীমানা থেকে পার্বতীপুর নেসকো কার্যালয়ের সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত পোলের ৩৩ কেভির প্রায় ২০ কিলোমিটার তিনটি তার নিয়ে যায় চোরের দল। যা দৃশ্যমান হলেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনরা থাকছেন নীরব।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈয়দপুর গ্রিড থেকে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমহনী এলাকা থেকে পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচ-ী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া, বেলাইচ-ী বাজার, বিএনপির বাজার, জাকেরগঞ্জ, বাল্লিনরঘাটের পেছনে গ্রামে ধানখেত হয়ে পার্বতীপুর মহাসড়কের পশ্চিম ধার দিয়ে শহরে প্রবেশ করে ওই সঞ্চালন লাইন। এরপর সেখান থেকে ঘুরে সুন্দরীপাড়া হয়ে ওই সঞ্চালন লাইনের পোলগুলো নেওয়া হয় পার্বতীপুর বিদ্যুৎ অফিসে। তবে বর্তমান পোলগুলো দাঁড়িয়ে আছে। নেই সেখানে তিন তারের উচ্চ ভোল্টেজের সরকারি দামি অ্যালুমিনিয়াম মার্টিন তার। যার বর্তমান সংস্থাপন ব্যয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।
স্থানীয়রা বলেন, বাড়ির পাশে খেতের ওপর পোলের মাধ্যমে তিন তার সমৃদ্ধ ওই সঞ্চালন লাইনগুলো দেখে আসছি জন্মের পর থেকে। হঠাৎ দেখি, পোল ফাঁকা। তার নেই। কে বা কারা তার নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এমন অ্যালুমিনিয়াম মার্টিন তার বাজারে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রকল্পের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। এতে সরকারের কোটি কোটি বিনিয়োগ করতে হয়েছে। খোলা বাজারে এর মূল্য নির্ণয় সম্ভব নয়।
সৈয়দপুর পাওয়ার গ্রিডের দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী (জিএমডি) মো. শাহজাহান আলী বলেন, তারগুলো আমাদের নয়। এগুলো ছিল পিডিবির। পরে নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকোর)। দীর্ঘ সময় সঞ্চালন লাইন নিষ্ক্রিয় থাকলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা না করায় সরকারি মালিকানাধীন মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যায়।
পার্বতীপুর বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র নেসকো কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হাসিবুর রহমান জানান, এখানে চুরি বেড়েছে। শুধু রাস্তায় নয়, শহরের আবাসিক এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ পাচ্ছি।
নেসকো পিএলসি রংপুর অঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, আমি গত মাসের ২ অক্টোবর এখানে যোগদান করেছি। তাই বিষয়টি জানতাম না। এখন খোঁজ-খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন