*** বেকার হাজারো হাউসবোট কর্মী, থমকে গেছে পর্যটন ব্যবসা
*** অনেকেই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্যত্র
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওড় এখন নিস্তব্ধ ও পর্যটকশূন্য। মাত্র তিন মাস আগেও যেখানে ছিল হাজারো ভ্রমণপিপাসুর উপচেপড়া ভিড়, সেখানে এখন সারি সারি হাউসবোট দাঁড়িয়ে আছে অলসভাবে। বন্ধ হয়ে গেছে হাওড়কেন্দ্রিক শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন হাজার হাউসবোট শ্রমিক, চালক ও সহকারী কর্মী।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওড়, নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা ও শিমুল বাগানসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো প্রতি বর্ষায় পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিশেষ করে হাউসবোটগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পর্যটকের চাপ আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ছিল। তবে আগস্টের পর পর্যটকের আগমন হ্রাস পেতে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওড়কে ঘিরে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই জমে ওঠে পর্যটন ব্যবসা। এ সময় আশপাশের দর্শনীয় স্থান-নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা, শিমুল বাগান ও জাদুকাটা নদীÑ ভ্রমণপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত হাওরে পর্যটকদের চাপ ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় বহুগুণ বেশি। আগাম বুকিং না দিলে দ্বিগুণ দামেও হাউসবোট পাওয়া যেত না। প্রায় ছয় শতাধিক হাউসবোট চলাচল করত প্রতিদিন, ফলে কর্মব্যস্ত সময় কাটাতেন নৌচালক, রাঁধুনি, সার্ভিস বয়সহ হাজারো শ্রমিক। তবে আগস্টের পর থেকেই পর্যটকদের আগমন হঠাৎ কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পুরোপুরি থমকে যায় পর্যটন ব্যবসা। এখন আনোয়ারপুর, মধ্যনগর, তাহিরপুর সদর বাজার ও মেশিনবাড়ি ঘাটে শত শত হাউসবোট পড়ে আছে নোঙর করা অবস্থায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌকা ঘাটগুলোতে গড়ে ওঠা দোকানপাটে আর আগের সেই কোলাহল নেই। নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা ও জাদুকাটা নদীর তীরে থাকা ছোটখাটো টি-স্টল, ফলের দোকান, কসমেটিকস ও সুভেনির বিক্রেতারা ব্যবসা না থাকায় দোকান গুটিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছেন।
নিলাদ্রী লেক ঘাটের দোকানদার এরশাদ মিয়া ও মুক্তার মিয়া বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে হাজারো পর্যটক আসত। এখন দিনে এক-দুজনও পাওয়া যায় না। দোকান খোলা রাখলে শুধু লোকসান।
হাউসবোট চালক আবদুল করিম বলেন, আগে প্রতিদিন নৌকা ভাড়া দিয়ে ভালো আয় হতো। এখন তিন মাস ধরে একটাও ট্রিপ পাইনি। মালিকের নৌকা ঘাটে পড়ে আছে, আমরা বেকার।
একইভাবে হাউসবোটে কাজ করা রাঁধুনি, সার্ভিস বয়, জেলে ও জ্বালানি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। পর্যটন-নির্ভর স্থানীয় অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান মানিক জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা ও মৌসুমভিত্তিক আকর্ষণ বাড়ানোর উদ্যোগ চলমান রয়েছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন দ্রুত বাস্তবায়ন। নতুবা পুরো হাওড়াঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবিকা আরও সংকটে পড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন