*** ঘনকালো ধোঁয়া আর উৎকট গন্ধে বিপর্যস্ত পরিবেশ
*** বাতাসে ছড়াচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ১৬ ধরনের রাসায়নিক গ্যাস
*** হুমকিতে জনস্বাস্থ্য কৃষিজমি ও জলজপ্রাণী
নরসিংদী সদর উপজেলার শালিধা আবাসিক এলাকার রাস্তার পাশে লাইসেন্সবিহীনভাবে গড়ে উঠেছে পুরাতন টায়ার পোড়ানোর ফ্যাক্টরি। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ১৬ ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক গ্যাস, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটা জনস্বাস্থ্য, কৃষিজমি ও জলজপ্রাণীর জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্থাানীয়দের দাবি সরেজমিন তদন্ত করে জনস্বার্থে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, নরসিংদী সদর উপজেলার শালিধা এলাকায় নরসিংদী মদনগঞ্জ সড়কের পাশে ডায়নামিক পাইরোল পাইবোলাইসিস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লি. নামে একটি পুরোনো টায়ার ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন শত শত টন পুরোনো টায়ার পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাব্যাপী উন্মুক্ত স্থানে পুরোনো টায়ার জ্বালিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিটুমিন এবং পোড়া তেল।
ফলে এ টায়ার ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত ক্ষতিকর দাহ্য পদার্থ ও বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এবং এ ফ্যাক্টরির পাশে প্রতিষ্ঠিত আমানত শাহ উইভিং প্রসেসিং লি. এ কর্মরত শত শত কর্মচারীসহ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এখানকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আমানত শাহ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল মিয়া বলেন, গত ২০২৩ সালেন ২৯ অক্টেবর পরিবেশ-বন ও জলবায়ু বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করে। এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুইলাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা দেওয়ার পর এ ফ্যাক্টরির মালিক আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আরও বেশি করে পুরাতন টায়ার জ্বালাতে থাকে।
পরবর্তীতে মো. হেলাল মিয়া অতিষ্ঠ হয়ে গত ৩ নভেম্বর নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও নরসিংদী প্রেসক্লাব বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে এ টায়ার ফ্যাক্টরিতে পুরাতন টায়ার পোড়ানোর ফলে এগুলো থেকে বিষাক্ত কার্বন মিশ্রিত স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয় যা আমানত শাহ উইভিং প্রসেসিং লি. এ কর্মরত শ্রমিক কর্মচারী ও এলাকার মানুষসহ প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়ায়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালের রাত আনুমানিক ৩টার সময় এ টায়ার ফ্যাক্টরিতে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সৃষ্টি হয়। এতে করে এলাকার মানুষের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে সকল প্রকার চেষ্টা করা হবে। তবে লাইসেন্স ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানটি চলতে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ মানুষের ক্ষতি হবে এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে ডায়নামিক পাইরোল পাইবোলাইসিস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লি. এর স্বত্বাধিকারী বাবুল চন্দ্র বর্মণ বলেন, আপনারা যা পারেন লেখেন, এতে আমার কিছু আসে যায় না। আমার ফ্যাক্টরি চলবে। একদিনের জন্যও বন্ধ হবে না। লাইসেন্স নবায়নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বাবুল চন্দ্র বলেন, আমার ফ্যাক্টরি চালাতে হলে লাইসেন্সের দরকার নেই। যদি কারো ক্ষমতা থাকে তাহলে আমার ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে বলুন।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বজলুল হুদা জানান, এ বিষয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফ্যাক্টরি থেকে আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে এ প্রতিষ্ঠানের মালিকের নিকট থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জরিমানা প্রদান করার পরও ফ্যাক্টরি মালিক নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে তার পেশিশক্তির বলে একটি ভাড়াকৃত জায়গায় পুনরায় পূর্বের ন্যায় পুরাতন টায়ার প্রজ্বলন করে আসছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানের নির্গত গ্যাসের কারনে এলাকার মানুষ শ্বাস প্রশ^াসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগছে এবং এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ধূষিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন