বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তাঁতিরা শীতের মৌসুমে উলের চাদর তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতপল্লি খট্ খট্ শব্দে মুখরিত থাকে।
উপজেলার নওদাপাড়া, দেবখন্ড, সানাপাড়া, জিয়ানগর ভেঁপড়া, বারাহী, বাঁকপালসহ বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৪০০ পরিবার চাদর ও অন্যান্য তাঁতজাত পণ্য তৈরি করে। তৈরি চাদরের অধিকাংশই শাওইল হাট, ধাপসুলতানগঞ্জ, তালোড়া ও জিয়ানগর হাটে বিক্রি করা হয়, এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বাজারজাত করা হয়।
তাঁতশিল্পীরা জানান, চাদরের প্রধান উপকরণ হলো উলের সুতা, যা শাওইল হাট থেকে সংগ্রহ করা হয়। এক কেজি সুতায় তিনটি চাদর তৈরি হয়। প্রতিটি চাদরের পাইকারি মূল্য ৩০০-৪৫০ টাকা। একজন কারিগর দিনে ৫-৭টি চাদর তৈরি করতে পারেন।
দেবখন্ড গ্রামের রতন, মহিউদ্দিন, আব্দুর রহমান, নওদাপাড়া গ্রামের নবাব আলী, আব্দুল মান্নান জানান, চাদর তৈরির প্রধান উপকরণ উলের সুতা। সেই সুতা আদমদীঘি থানার শাওইল হাট থেকে সংগ্রহ করা হয়। ওই হাটেই তাদের তৈরি অধিকাংশ চাদর বিক্রি করেন। এ ব্যবসা শুরু আশ্বিন থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন স্থানের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। বাজারে অন্যান্য চাদরের তুলনায় তাদের তৈরি করা চাদরের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এর চাহিদা থাকে বেশি। ফলে এ কয়েক মাস তাঁতপল্লির বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ চাদর তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। সংসারের কাজের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এ ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবানও হন তারা।
নওদাপাড়া গ্রামের জহরুল ইসলাম জানান, এক সময় তার বাড়ি ছিল না। উলের চাদরের ব্যবসা করে ইটের বাড়ি ও মুরগির খামার করছেন। একই গ্রামের অপর ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, চাদর তৈরি ও বিক্রি করে তার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। তিন মেয়ে এক ছেলে স্কুলে লেখাপড়া করে। তিন বিঘা জমি পত্তন নিয়ে চাষাবাদ করছেন।
কারিগররা আরও জানান, নিজস্ব পুঁজির অভাবে অনেকেই ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে উলের সুতা কিনে চাদর তৈরি করেন। যে কারণে ঋণ পরিশোধ করে হাতে তেমন কিছু থাকে না।
সরেজমিনে দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ফুটানিগঞ্জ গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এই গ্রামে প্রায় ৩৫০-৪০০ পরিবারের সদস্যর মধ্যে ৯০ শতাংশ পরিবারই তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই শিল্পকে বাঁচাতে তারা নিবিড় বন্ধন গড়ে তুলেছে। ওই গ্রামের তাঁতশিল্পের কারিগর লুৎফর রহমান, এমদাদুল, মিনাজ, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌস, আকলিমা বেগম, আফরোজাসহ অনেকেই বলেন, আজকাল অনেকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কেউ কেউ পাওয়ার লুম মেশিন কিনেছেন। সনাতনি পদ্ধতির আমলের হাতে চালিত পুরোনো হ্যান্ডলুম মেশিন ব্যবহার করে দিনে ৮ থেকে ১০টি চাঁদরসহ অল্প সংখ্যা গামছা, লুঙ্গি, কম্বল তৈরি করা যেত। এখন আধুনিকতা ছোঁয়ায় পাওয়ার লুম মেশিন কিনতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে উচ্চ সুদের ঋণ নিয়ে তাদের তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের দাবি সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ ও আর্থিক সহযোগিতায় শহর স্বল্প সুদে অর্থ পেলে তাঁতশিল্পের কাক্সিক্ষত সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন